ঢাকা শিশু হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম বন্ধ
ভোগান্তি কমাতে প্রতিদিন নির্ধারিত সংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন চারটি বুথে ৮০০ জনকে টিকা দেয়া হয়ে থাকে। মানুষের চাপ থাকলে সেক্ষেত্রে আরো বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়। এ কারণে ভ্যাকসিন শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার এ হাসপাতালে মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম রয়েছে। নতুন করে কাউকে টিকা নিতে আসতে এসএমএস দেয়া হচ্ছে না। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মোট ৪০ জন টিকা নিতে এসে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মোবাইলে এসএমএস পেয়েও অনেকে নির্ধারিত সময়ে টিকা নিতে কেন্দ্রে আসতে পারেননি। দেরি করে শিশু হাসপাতাল কেন্দ্রে এসে টিকা না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে দেখা গেছে। দূর থেকে এসেও টিকা না পেয়ে অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার নিজের কপালের উপর দোষ দিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
মিরপুর দোয়ারিপাড়া থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন মোজ্জামেল হোসেন বাবু। ভিড় এড়াতে সকাল সকাল শিশু হাসপাতালে আসলেও টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে রেজিস্ট্রেশন করলেও গত ৮ আগস্ট মোবাইলে এসএমএস আসে টিকা নেয়ার। আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় সেদিন আসতে পারিনি বলে আজ সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। এখানে এসে দেখছি ভ্যাকসিন শেষ হয়েছে। পরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। পরে কবে দেয়া হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।’
যেতে আসতে তার ৬০০ টাকা রিকশা ভাড়া খরচ হয় বলেও জানান তিনি।
গৃহিনী ফাতেমা মিরপুর ১ নম্বর থেকে টিকা নিতে এসেছিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। আসতে তার রিকশা ভাড়ার পেছনে খরচ গেছে ২০০ টাকা। তারপরও হাসপাতালে এসে দেখলেন টিকা নেই! টিকা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট আমার টিকার ডেট ছিল। ব্যস্ততার কারণে আসতে পারিনি। আজ আসলে বলল ভ্যাকসিন শেষ হয়ে গেছে! পরে যোগাযোগ করতে বলেছে।’
জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলাকায় টিকা দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ভ্যাকসিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. কিংকর ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চারটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৮০০ জনকে একটি ডোজ দেয়ার কথা থাকলেও জনমানুষের ভোগান্তি কমাতে আমরা বেশি টিকা দিয়েছি। কোনো কোনো দিন ১২০০ থেকে ১৩০০ জনকেও টিকা দেয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগে প্রথম ডোজের টিকা শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে মঙ্গলবার থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করা বিদেশি, প্রবাসী, শিক্ষার্থীদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএস দিয়ে পরদিনই টিকা দেয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তিকে শতভাগ টিকা প্রদান করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন করা সাধারণদের ৯০ শতাংশ টিকা দেয়া শেষ হয়েছে। অনেককে ফোন করেও টিকা নিতে আসতে বলা হয়েছে।
কবে থেকে আবারো টিকা কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। একটি প্যাকেটে ১০ ডোজ থাকায় ১০ জন আসলে একসঙ্গে দেয়া হচ্ছে। কারো বাসা দূরে হলে তাকে অপেক্ষায় রেখে টিকা দেয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তীদের পরে আসতে বলা হচ্ছে। ১০ জন হলে তাদের ফোন করে ডেকে এনে টিকা দেয়া হচ্ছে।
নতুন করে সরকারি নির্দেশনা এলে আবারও টিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।
এমএইচএম/এসএইচএস/এমকেএইচ