তাপসকে ‘ডেঙ্গুর লার্ভা উপহার’, কাউন্সিলর বললেন ‘খোকনের নাটক’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ‘এডিসের লার্ভা উপহার কর্মসূচি’ করা হয়েছে। ‘বিক্ষুব্ধ পুরান ঢাকার বাসিন্দারা’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ডিএসসিসির নগর ভবনের সামনে তারা এ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
কর্মসূচির শেষ দিকে ‘এডিস মশার লার্ভার পাত্র’ ছিনিয়ে নিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিএসসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াদের অভিযোগ, কাউন্সিলর আলমগীরের হুমকি-ধামকিতে তারা কর্মসূচির স্থান ত্যাগ করেছেন।
এদিকে কর্মসূচি করতে আসা নগর ভবন এলাকা ছাড়ার পর কাউন্সিলর আলমগীর ও তার এক সহকারী লার্ভার কাচের পাত্র নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী নগর ভবনের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। তিনি ডিএসসিসি মেয়রের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। সাড়া না পেয়ে লার্ভার পাত্র নিয়ে নগর ভবন থেকে বেরিয়ে যান কাউন্সিলর।
এর আগে লার্ভা উপহার কর্মসূচির শুরুতেই বক্তৃতা করেন পুরান ঢাকার বংশালের বাসিন্দা আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সুদৃষ্টির জন্যই তাকে লার্ভা উপহার দিতে এসেছি। এ লার্ভা কামরাঙ্গীরচর থেকে নিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতা, মশা আর ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এ থেকে বাঁচার জন্যই আজ আমাদের এখানে আসা। আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।’
অন্যদিকে লার্ভা উপহার কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। যিনি ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে এমডিকে খাওয়াতে গিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন।
কর্মসূচিতে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বসবাস করছি যে, এখানে (নগরভবন) এসে দাঁড়াবো, তা নিয়েও আমাদের ভয়-আতঙ্ক। মনে হচ্ছে, যেন কোনো এক যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এসেছি। নগর ভবনের সামনে দেখছি ময়লা পড়ে আছে। উল্টো পাশে পানি জমে আছে। মশকনিধনে দক্ষিণ সিটির এমন অবস্থা। এসব প্রশ্নের উত্তর মেয়র সাহেব কীভাবে দেবেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যেই অঞ্চলে বাস করি, সেখানে কোনো মশক নিধন কার্যক্রম নেই। আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত নয়জন মারা গেছেন। মানুষ টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। খেতে পারছেন না। তাদের কোনো রকম ভ্রূক্ষেপ নেই। তারা জমিদার হয়ে বসে আছেন। যেন আমরা প্রজা আর তারা রাজা। তাদের সামনে এমন প্রোগ্রাম করে কাজ হবে না। চোখে আঙুল দিয়েই কথা বলতে হবে। আমাদের জীবনের তো মূল্য আছে।’
এদিকে, মিজানুর রহমানের বক্তৃতা চলাকালে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলমগীর ও তার একজন সহকারী বলেন, ‘এ কর্মসূচি ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খাকনের নাটক।’
জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। ২০১৯ সালে যখন ঢাকা শহরে ডেঙ্গু ছিল, তখন আমরা এখানে (নগর ভবনে) দাঁড়িয়েছিলাম। যেদিন এখানে দাঁড়াবো, তার আগের দিন আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সাঈদ খোকনের পক্ষে আমরা আসিনি। আপনি তাপসের কথা বলতে আসছেন? আসলে সাঈদ খোকন ও তাপসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। লজ্জা রাইখেন, লজ্জা। আসল সমস্যা হচ্ছে, মেয়র জনগণের কাছে কোনো রকম জবাব দিতে বাধ্য না।’
মিজানুর রহমান যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন তার পেছন থেকে একেক করে লোকজন সরিয়ে দিচ্ছিলেন শাহবাগ থানা পুলিশ এবং নগর ভবনের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। এমন পরিস্থিতি দেখে মিজানুর তার বক্তৃতা শেষ করে দ্রুত চলে যান।
এসময় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজনের হাত থেকে এডিসের লার্ভার কাচের পাত্রটি নিয়ে যান ওই কাউন্সিলর। তিনি পাত্রটি হাতে তুলে নিয়ে বলেন, ‘এ কর্মসূচির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি পুরান ঢাকার কাউন্সিলর, পুরান ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী নেই। মশার বিস্তার নেই। আমরা মশক নিধনে, এডিসের লার্ভা ধ্বংসে সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।’
এমএমএ/এএএইচ/জেআইএম