মাদক কারবারে ভর করে দাম্ভিক হয়ে ওঠেন মেয়র শাহানশাহ
মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষা কর্মকর্তাকে থাপ্পড় মেরে হারান দলীয় পদ। বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। বিতর্কের মুখে নিজেকে বাঁচাতে জামালপুর থেকে চলে আসেন ঢাকায়। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা। নজরদারি শুরু করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরার হোটেল ডি মেরিডিয়ান থেকে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বরখাস্ত মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ও নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, বরখাস্ত পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। তিনি দাম্ভিক এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় স্পট ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘মারামারি ও পুলিশ অ্যাসল্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। ঘটনার দিন শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিত করেন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে করেছি। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, মাদক কারবারে প্রভাব খাটাতেন তিনি। এতে দাম্ভিক হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন ক্ষমতার অপব্যবহার।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়া তিনি একটি দলের সঙ্গে ছিলেন, সেই দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কারও সহযোগিতা পাননি। তার আচরণ ছিল গর্হিত ও লজ্জাজনক। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বহিষ্কার করেছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। দেশত্যাগের চেষ্টাও করেননি তিনি। তাকে যারা মাদক সরবরাহ করেছে, তাদের কয়েকজনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১৬ ডিসেম্বর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাই স্কুল মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থাপ্পড় মারেন মেয়র শাহানশাহ। পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় নামের সিরিয়াল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। পরে তিনি থানায় মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরপর অসদাচরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পৌর মেয়রের পদ থেকে শাহানশাহকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। একই সঙ্গে তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। তিনি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
টিটি/এএএইচ/জেআইএম