পরীমনির বাসায় জব্দ মদে অ্যালকোহলের বিষয়ে যা জানালো র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২২
ফাইল ছবি

ঢাকার সাভারের বোটক্লাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আলোচনায় আসেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। সে ঘটনায় কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন, তারা আবার জামিনও পেয়ে গেছেন। এর মধ্যেই আবার একাধিক ক্লাবে পরীমনির ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বিকেল ৪টায় হঠাৎ নায়িকা পরীমনি তার ফেসবুক পেজে লাইভ শুরু করেন। লাইভে তাকে ভীতসন্ত্রস্ত দেখা যায়।

পরে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের’ ভিত্তিতে পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযানে চালাচ্ছেন সংস্থাটির গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। টানা কয়েক ঘণ্টা অভিযানের পর ১৮ লিটার মদ ও বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পরীমনিকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের পর র‌্যাব দাবি করে, পরীমনির বাসায় ছিল মিনি বার।

র‌্যাব জানায়, পরীমনির বাসায় অভিযানের পর জব্দ করা মদের বোতলের গায়ে অ্যালকোহলের মাত্রা লেখা ছিল ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত। সে হিসেবেই তারা মামলার এজাহার লিখেছেন। তবে সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জব্দ এসব মদে অ্যালকোহলের পরিমাণ ছিল ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এদিকে, আদালত সূত্র জানায়- আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

jagonews24

জব্দ মদের মধ্যে অ্যালকোহলের পরিমাণের বিষয়ে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) র‍্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘পরীমনির বাসায় জব্দ মদের মধ্যে যদি অ্যালকোহলের অস্তিত্ব না পাওয়া যেত তাহলে সেটা নিয়ে কথা উঠতেই পারতো কিংবা যদি ৫ শতাংশের কম অ্যালকোহল থাকতো সেটা নিয়েও কথা উঠতে পারতো। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন কোনো অভিযানে যায় আর সেখানে আলামত হিসেবে মদ উদ্ধার হলে কখনোই মদ পরীক্ষা করে এজাহার লেখা হয় না। স্বচক্ষে যা দেখা হয় এবং আলামত হিসবে উদ্ধার করা হয় সেগুলোই এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- টাকা উদ্ধার হলে এজাহারে টাকার সিরিয়াল নম্বরসহ লেখা হয়। অনুরূপভাবে মদ পাওয়া গেলে সেগুলো মদের ব্র্যান্ডসহ এবং বোতলের গায়ে লেখা অ্যালকোহলের পরিমাণসহ এজাহারে উল্লেখ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরীমনি জামিনের পরে কখনোই বলেননি বোতলের ভেতর পানি ছিল। পরীমনির বাসায় জব্দ মদের বোতলের মধ্যে কী পরিমাণ অ্যালকোহল ছিল সেটা র‍্যাব আগে থেকে কীভাবে বুঝবে? পরীমনিসহ তার বাসায় আরও তিন থেকে চারজন লোক সবসময় থাকতেন। তারাও কখনো মদের বিষয়ে কথা বলেননি। কারণ পরীমনির বাসায় মদ আগে থেকেই থাকতো এবং মদের পার্টি হতো।’

সাক্ষীর বিষয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে সবসময় তিনজন সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। সেখানে দুজন সিভিলিয়ানের সাক্ষীর প্রয়োজন হয় এবং আমাদের একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সাক্ষী দিতে হয়। সাক্ষী কখনোই অভিযানের অংশ নয়।’

এদিকে, মদে অ্যালকোহলের পরিমাণের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, কোনো অভিযানের সময় কিংবা কাউকে গ্রেফতারের সময় সেখানে যা পাওয়া যাবে ঠিক সেভাবেই এজাহারে উপস্থাপন করে র‍্যাব। এর বাইরে নতুন করে কিংবা কাটছাট করে এজাহারে লেখার সুযোগ নেই। এরপর থানায় জমা দেওয়ার পর থানা পুলিশ বোতল পরীক্ষা করবে, অ্যালকোহলের পরিমাণ পরীক্ষা করবে। পরীক্ষার পর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে।

তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো আদালতে তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বতে পারবো না।

এদিকে, অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পরীমনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বিদেশি মদপানের অনুমতি নিয়েছিলেন। এর মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তিনি আর এর মেয়াদ বাড়াননি। শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি কবে এই মদ কিনেছিলেন, অভিযোগপত্রে তার উল্লেখ নেই।

পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হলেও তার কাছ থেকে চারটি ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি আইপ্যাড, একটি মেমোরি কার্ড, একটি মডেম, তিনটি ব্যাংক এটিএম কার্ড ও দুটি পাসপোর্ট জব্দের কথা উল্লেখ করে র‌্যাব।

jagonews24

পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযানের পর র‌্যাব জানায়, অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। তার ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। তার পরদিন ৫ আগস্ট র‌্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী বিপুল বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। এ মামলায় পরীমনিকে তিন দফায় মোট সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। তার বাসায় একটি মিনি বারও রয়েছে। তিনি বাসায় নিয়মিত মদের পার্টি করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ পরীমনির বাসায় এসব মাদক সাপ্লাই (সরবরাহ) করতেন। কোনো বাসায় মিনি বার থাকবে তা আইনসিদ্ধ নয়।

টিটি/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।