বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ৫১ টি এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন’ প্রবর্তন করেছে। বন্যপ্রাণী অপরাধ উদঘাটনে তথ্য (প্রদানকারী) পুরস্কার বিধিমালা, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী পাচাররোধে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধ দমন ইউনিট কাজ করছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বনবিভাগের কর্মীদের আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জেব্রার মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ২০২২ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বন অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনাসভায় ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মন্ত্রী। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে এবার ‘বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, বন্যপ্রাণী ও এর আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘সুফল প্রকল্প’ এর মাধ্যেম বিভিন্ন ধরনের কাজ চলমান আছে। হাতি, বাঘসহ দেশের বন্যপ্রাণীগুলোকে রক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বন্যপ্রাণীর সম্ভাব্য করিডোর নিশ্চিত করা, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে আবাস সংযোগের বর্তমান অবস্থা নিরূপণের জন্য সমীক্ষা প্রকল্পটি সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী ও মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা, ২০২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা-পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি এবং মানসম্মত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে গাজীপুরে শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের ১৬১৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবস্থা মূল্যায়নপূর্বক বিপন্নপ্রায় প্রজাতির লাল তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, মহাবিপন্ন বাংলা শকুন রক্ষায় ২০১৪ সালে দেশের দু’টি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ভেটেরিনারি ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রফেনের উৎপাদন দেশব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের জন্য ৬টি এলাকাকে ‘ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রালেশিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট’ ঘোষণা করা হয়েছে। ডলফিন, তিমি, হাঙ্গর এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ এলাকার ১৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, হাতি সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে মাইক সাইট ঘোষণা করা হয়েছে। হাতি সমৃদ্ধ বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান সৃজন করা হচ্ছে।
মন্ত্রী এসময় হাতি সংরক্ষণ ও হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন সাতকানিয়ায় অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এসময় বন্যপ্রাণী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। মন্ত্রী বলেন, এসব কার্যক্রমগুলো সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করার মাধমে দেশের বন্যপ্রাণীর অবস্থা উন্নত হচ্ছে।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চেীধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন এবং অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো. মনিরুজ্জামান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিবুল আমিন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু প্রমুখ।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা ছাড়াও বন্যপ্রাণীর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এছাড়া আলোচনাসভার পরে বিভিন্ন ধরনের বন্য পাখি অবমুক্ত করে অতিথিরা। ঢাকার পাশাপাশি দেশের ২৪ টি জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এমইউ/এমএএইচ/জিকেএস