হানিফ সংকেতের টাকায় মেয়ের বিয়ে দেবেন অন্ধ হেলাল


প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
ছবি-রিয়াসাদ আজিম

দুটি চোখই অন্ধ হেলাল মিয়ার (৫৫)। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামে। অন্ধ হলেও জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক নয় বরং রাজঘর গ্রামের সঙ্গীতের রাজা হিসেবে পরিচিত এই হেলাল মিয়া। তবে নির্মম হলেও সত্য হেলাল মিয়া ছাড়াও তার পরিবারের আরও ছয় সদস্য জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু এই দৃষ্টিহীনতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাদের গানের প্রতিভাকে। দৃঢ় মনোবল আর গানকে পুঁজি করে হেলাল ও তার পরিবারের সদস্যরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

Top
গান নিয়েই হেলালের সব ভাবনা, গানই হেলালের জীবন। তাইতো হেলালদের সকালটা শুরু হয় গানের সুরে সুরে। মারফতি, মুর্শিদী আর কাওয়ালী গানই বেশি করেন হেলাল ও তার পরিবার। তবে লোক সঙ্গীতেও ভালো সুর তুলতে পারেন তারা।

জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে গান পরিবেশন করেন হেলাল ও তার পরিবার। গানের সঙ্গে কেউ বাজান হারমোনিয়াম, কেউ করতাল আবার কেউবা ঢোল। গান শুনে খুশি হয়ে দর্শক-শ্রোতারা যা দেন তাতেই চলে যায় দরিদ্র হেলালের সংসার।

Top
অন্ধ হেলাল জাগো নিউজকে জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের খ্যাতিমান আধ্যাত্বিক গানের শিল্পী ওস্তাদ শাহনূর শাহ্ এর কাছ থেকে সঙ্গীতের তালিম নেন তিনি। এরপর থেকেই তিনি গান-বাজনা করে বেড়ান। তিনি ছাড়া তার চার ছেলে, এক মেয়ে ও এক নাতনী জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু পরিবারের এসব অন্ধ সদস্যদের করুণার পাত্র না বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির বদলে তিনি নিজেই তাদেরকে গানের তালিম দিয়েছেন। চোখে দেখতে পাওয়া একমাত্র মেয়ে শারমিনই এখন তাদেরকে গান পরিবেশন করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর মুক্ত মঞ্চে নিয়ে আসেন।

Top
গত ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হেলালের জন্মান্ধ এই পরিবারটিকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেখানে হেলাল মিয়া হানিফ সংকেতকে বলেন, গত ২০ বছর ধরে আপনার কণ্ঠ শুনছি। আমি তো দেখতে পাইনা, তাই আপনার কাছে বসে কথা বলার ইচ্ছে ছিল আমার। সেই ইচ্ছে পূরণ হলো আজ। অনুষ্ঠানে হেলাল মিয়ার করুন জীবন কাহিনীর বর্ণনা তুলে ধরা হয় এবং ইত্যাদির পক্ষ থেকে হেলালকে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা। এই টাকা হেলাল তার মেয়ে শারমিনের বিয়ের খরচের জন্য ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে হেলাল মিয়া বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু আমার ছোট্ট একটি ঘর ছাড়া আমার তেমন কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। তাই আমি ইত্যাদি থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা ব্যাংকে রেখে দিয়েছি। এই টাকা দিয়েই মেয়ের বিয়ে দেবো।

bramonbaria-blind
তবে হেলাল মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের কথা জানতে পেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাইরে থেকে অনেক জেলার মানুষ আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে সরকারি রিলিফের চালের জন্য একটি ভিজিএফ কার্ড চেয়েছিলাম। চেয়ারম্যান দেবে-দিচ্ছি করতে করতে বছরের পর বছর ঘুরিয়েছে। কিন্তু কার্ড দেয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্ধ হেলাল মিয়া ও তার পরিবার ভিক্ষাবৃত্তির বদলে গানের মাধ্যমে সমাজে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো ধরণের সুযোগ সুবিধ পাননি দৃষ্টিহীন এই পরিবারটি। তাই অনেকটা কষ্টেই কাটছে তাদের যাপিত জীবন।

আজিজুল আলম সঞ্চয়/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।