এখনো শঙ্কামুক্ত নন কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি
গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনির অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। তার শরীর ১৫ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে। তবে দগ্ধ হওয়ার সময় থেকে এখন কিছুটা ভালো তিনি।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল মো. জিল্লুর রহমানের চিকিৎসার জন্য গঠন করা মেডিকেল বোর্ডের সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনির অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। প্রাপ্তবয়স্ক রোগী ১৫ শতাংশের বেশি দগ্ধ হলে তখন আমরা এটাকে বলি সংকটজনক। তাকে ভর্তি করতে হয়। আবু হেনা রনির (৩২) ও কনস্টেবল মো. জিল্লুর রহমানের (৩১) শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে। এই দুই রোগী যে শঙ্কামুক্ত এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না।
তিনি বলেন, আজকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষায় কিছু অস্বাভাবিকতা পাই। যেটা নিয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা করে কিছু নতুন চিকিৎসা সংযোজন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই চিকিৎসা চলবে এখন।
এই চিকিৎসক বলেন, দুজনেরই শ্বাসনালি পোড়া আছে। তবে এতটা গুরুতর নয়। অন্যান্য রোগীদের যতটা আশঙ্কাজনক হয়, তাদেরটা এতটা আশঙ্কাজনক নয়। আগামীকাল (সোমবার) বেলা ১১টায় আমরা আবারও বসবো। প্রতিদিনই তাদের মনিটর করা হবে।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি দেখেছি এর থেকে কম দগ্ধ রোগীদের কেউ কেউ খারাপ হয়ে যায়। সুতরাং দগ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে আমি বলি, যতদিন হেঁটে বাসায় না যাবে, ততদিন কিছুতেই বলা যাবে না শঙ্কামুক্ত। কারণ প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়।
তিনি বলেন, তাদের শরীর ফুলে যাওয়া বা কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুই দিন আগে যে অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তারচেয়ে ভালোই রয়েছে।

আবু হেনা রনিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাইরে (বিদেশে) নিয়ে যাওয়া কিংবা না নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং তাদের পরিবার রয়েছে, তারা হয়তো বলতে পারবেন। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটা রোগীর অধিকার রয়েছে তারা কোথায় চিকিৎসা করাবেন। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই। তারা যদি মনে করেন রোগীকে কোথাও নিয়ে যাবেন, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এ ধরনের দগ্ধ রোগী আমরা ম্যানেজ করে থাকি, এটুকু আমরা বলতে পারি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রবিউল করিম খান (পাপন), আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. হুমায়ুন কবির, কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনির স্ত্রী রুমানা রশীদ সম্পাসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরে পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ও নাগরিক সম্মেলনে আবু হেনা রনিসহ পাঁচজন দগ্ধ হন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের উদ্বোধনী মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রধান অতিথির হাতে বেশ কিছু বেলুন দেওয়া হয় উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বারবার চেষ্টা করলেও বেলুনগুলো উড়ছিল না। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য সে বেলুন মঞ্চের পেছনে নিয়ে যান। শুধু পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে চলে যান।
অতিথিরা মূল মঞ্চে চলে যাওয়ার কিছু সময় পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুন বিক্রেতাকে বকা দেন। এতে বিক্রেতা নিজেই বেলুনে আগুন লাগিয়ে ওড়ানোর চেষ্টার করেন। এ সময় বিস্ফোরণ ঘটে বেলুনে। এতে পাশে বসে থাকা কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ পাঁচজন দগ্ধ হন।
আবু হেনা রনি পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় টিভি শো মীরাক্কেলের বাংলাদেশি কৌতুক অভিনেতা।
আরএসএম/জেডএইচ/এমএস/ইএ