৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়
চলতি বছরের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে মাদারীপুর জেলার চারটি উপজেলার ৬৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বোর্ড নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮০ টাকা আদায় করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদেরকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়েছে কি না তার প্রতিবেদন ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়ার তথ্য জমা দেননি বলে জানা গেছে।
তবে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের এসএসসি কর্নারে জরুরি নোটিশ হিসেবে থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই চিঠি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের পরপরই গোপনে তদন্ত করে সারাদেশে অতিরিক্ত ফি আদায়কারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলায় ১৮টি, রাজৈরে ১৪টি, কালকিনিতে ১৬টি ও শিবচরে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বেও জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়নি।
বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৭.০০.০০০০.০৭২.৪৪.০৯৭.১২.৭৬৯, তাং-০২/০২/১৬) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার চারটি উপজেলার ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, মাদারীপুর সদর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭৬০ টাকা, মাদারীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ছয় হাজার ৬৬০ টাকা, আলহাজ আমিনউদ্দিন হাই স্কুল দুই লাখ ৭৩ হাজার ৫শ` টাকা, কুলপদ্দি উচ্চ বিদ্যালয় ৩৪ হাজার ৫শ` টাকা, ইটখোলা বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয় ৫৫ হাজার ৩শ` টাকা, কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ১৬ হাজার ২শ` টাকা, জুলিও কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ২০ হাজার টাকা, ছিলারচর বালিকান্দি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাই স্কুল ১৭ হাজার ২শ` টাকা, আল জাবির হাই স্কুল ৩৯ হাজার ২শ`টাকা।
এছাড়া, মাদারীপুর আহমাদিয়া কামিল মাদ্রাসা ২১ হাজার ৬শ` টাকা, ছিলারচর দাখিল মাদ্রাসা ১৬ হাজার টাকা, চরনাসনা ফাজিল মাদ্রাসা ৫৫ হাজার ২শ` টাকা, খামারবাড়ি নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ৪৬ হাজার ২শ` টাকা, চর গোবিন্দপুর আলিয়া মাদ্রাসা ৯১ হাজার ৮শ` টাকা, বড়াইলবাড়ি সুলতানিয়া আলিম মাদ্রাসা ৬৪ হাজার ৮শ` টাকা, চরমুগুরিয়া এনআই দাখিল মাদ্রাসা ৫৮ হাজার ৯শ` টাকা,উত্তর চর গোবিন্দপুর মিয়াচান দাখিল মাদ্রাসা ৫৬ হাজার টাকা।
রাজৈর-গোপালগঞ্জ কেজেএস পাইলট ইনস্টিউিট ২৫ হাজার ৮শ` টাকা, আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৩০ হাজার ৮শ` টাকা, চৌয়ারীবাড়ি ভেন্নাবাড়ি মতিলাল উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ২০ হাজার ৮শ` টাকা, হরিদাসদি-মহেন্দ্রদী উচ্চ বিদ্যালয় ৭৩ হাজার ৭শ` টাক, ইশিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ৯০ হাজার টাকা, সাতপাড় দ্বীপচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয় ৩০ হাজার ৮শ` টাকা, শাখারপাড় উচ্চ বিদ্যালয় ৮৯ হাজার ৮শ` টাকা, শহীদ সর্দার শাজাহান বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এক লাখ ৪৫ হাজার ১শ` টাকা, টেকেরহাট পপুলার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২ লাখ ৪৪ হাজার ২শ` টাকা, আল হেরা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ৩২ হাজার ২শ` টাকা, স্বরমঙ্গল টেকেরহাট রাশিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ৭৬ হাজার ৮শ` টাকা, সাতবাড়িয়া নুরে মোহাম্মাদী দাখিল মাদ্রাসা ৯৩ হাজার একশ , কাশিমপুর হোসানিয়া দাখিল মাদ্রাসা ৬৬ হাজার ৫শ` টাকা, বিদ্যানন্দী হোসেনপুর দাখিল মাদ্রাসা ২৮ হাজার টাকা।
কালকিনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ টাকা, কালকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৫৭ হাজার ৯শ` টাকা, শশিকর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৫৪ হাজার টাকা, বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৮০ হাজার ৮শ` টাকা, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন অ্যাকাডেমি এক লাখ ৭২ হাজার ১৪০ টাকা, কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৬৬ হাজার ২শ` টাকা, গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয় দুই লাখ ৬৪ হাজার টাকা, কয়ারিয়া ঈদগা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৪ হাজার ৮শ` টাকা, নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ৫৪ হাজার ১শ` টাকা, মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৯৯ হাজার ১শ` টাকা, কালকিনি ফাজিল মাদ্রাসা ৩৩ হাজার, কালকিনি বালিকা দাখিল মাদ্রাসা ১৪ হাজার, মোল্লারহাট দারু সুন্নাহ সালেহীহা ফাজিল মাদ্রাসা ১৮ হাজার ৯শ` টাকা, খাসেরহাট দাখিল মাদ্রাসা ৩৭ হাজার ৮শ` টাকা, এনায়েতনগর ওয়াজিয়া দাখিল মাদ্রাসা ৪৩ হাজার ৪শ` টাকা, ফরাজী হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ৫৬ হাজার টাকা।
বাজিতপুর হাজেরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ভদ্রাসন জি.সি অ্যাকাডেমি দুই লাখ ৫৬ হাজার টাকা, দত্তপাড়া টিএন অ্যাকাডেমি এক লাখ ৮৯ হাজার, হোগলার মাঠ এসকে পি উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৮শ` টাকা, মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় ২৮ হাজার টাকা, রাজারচর উচ্চ বিদ্যালয় ৯২ হাজার টাকা, সন্ন্যাসীরচর উচ্চ বিদ্যালয় ৭৭ হাজার ৬শ` টাকা, শেখ ফজিলাতুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৩ লাখ ৫৩ হাজার একশ টাকা, শিরুয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় এক লাখ ৩২ হাজার ৩শ` টাকা, উমেদপুর ওজিফা রবিউল্লাহ লাইসিয়াম উচ্চ বিদ্যালয় তিন লাখ ৪৫ হাজার ৮শ` টাকা, আবু তাহের দাখিল মাদ্রাসা ৬২ হাজার ৪শ` টাকা, আল বায়তুর মামুর সিনিয়র মাদ্রাসা ৮৩ হাজার ৬শ` টাকা, কাঠালবাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসা এক লাখ ২৯ হাজার টাকা, উৎরাইল দাখিল মাদ্রাসা ৬০ হাজার টাকা, উৎরাইল মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ৩৯ হাজার ৬শ` টাকা, মির্জারচর সিনিয়র মাদ্রাসা ১৪ হাজার ৪শ` টাকা, মুন্সী কাদিরপুর আমিনিয়া আমজাদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ১৯ হাজার ৮শ` টাকা।
উমেদপুর অজিফা রবিউল্লাহ লাইসিয়াম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি কিনা এ ব্যাপারে ইতোপূর্বেতো আমার কাছে কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি জানতে চাইনি। এপর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি বা আদেশ আমি এখনো পাই নাই। টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দেশ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেব।
দত্তপাড়া টিএন অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক ও শিবচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল ওহাব মিয়া জাগো নিউজকে জানান, এসএসসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ বোর্ডে নির্ধারিত ফির চেয়ে এতো বেশি (উল্লেখিত টাকা) টাকা নেয়া হয় নাই।
আল বায়তুল মামুর সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুল মালেক মিয়া জাগো নিউজকে জানান, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা যেখানে বেতনই দিতে পারেন না, সেখানে তারা এতো টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে পারে না। তিনি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল মিয়া জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা এসেছে। এখনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দেয়ার প্রমাণ আমার কাছে দাখিল করেনি।
মাদারীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/পিআর