যশোরে ৪০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুলিশ ক্লাব নির্মাণ


প্রকাশিত: ১২:১৫ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

যশোরের গাড়িখানা এলাকায় একশ বছর ধরে সরকারিভাবে বরাদ্দ নিয়ে বসবাসকারী ৪০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুলিশ ক্লাব নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া না মেনে গায়ের জোরে পুলিশ এই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও দখলে নিয়ে টাঙিয়ে দিয়েছে পুলিশ ক্লাবের সাইনবোর্ড। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক।
 
তিনি বলেন, ১৯১০ সালে শহরের গাড়িখানা রোড এলাকার সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে গোপী নাথ রায় চৌধুরী, মাসুদ আলম, আসাদুজ্জামান শিপলুসহ বেশ কয়েকজন বংশানুক্রমে ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেওয়া জমিটি নিজেদের দাবি করে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। কিন্তু বিচারিক আদালতে পুলিশ হেরে যায়। বর্তমানে মামলাটি জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে এই এলাকার দোকান ও আবাসিক ভবন থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদে নামে পুলিশ। রাতের আঁধারে তারা বেশ কয়েকটি দোকান দখল করে দেয়াল তুলে পুলিশ ক্লাবের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। এখন এই এলাকার আবাসিক ভবন থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পরিবারগুলোকে হুমকি, ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নেমে যেতে বলা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানান, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানও আইন বহির্ভূত উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ডিসি, এসপিকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তা মানছে না পুলিশ। এমনকি যশোরের জেলা প্রশাসকও পুলিশ প্রশাসনকে এভাবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাতে নিষেধ করেছে। কিন্তু তার কথাও পুলিশ শুনছে না। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের এই আন্দোলন প্রক্রিয়াকে ব্যহত করতে পুলিশ বুধবার রাতে ওই এলাকায় বোমাবাজি করে এই পরিবারগুলোর মানুষদের আসামি করে মামলা করেছে। এ কারণে খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। এই অবৈধ দখল প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান তিনি।

পুলিশের এই অবৈধ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে যানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মীর মোহাম্মদ সাফিন মাহমুদ জমিটি পুলিশের দাবি করে বলেন, সরকারি জমি উদ্ধারে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আদালতে মামলা চলাকালে উচ্ছেদ অভিযান বিধিবহির্ভূত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দখলকারীরা জাল দলিল দেখিয়ে মামলা করেছেন। সরকারি স্বার্থে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন তারা।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আইন বহির্ভূত কাজে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও যশোর জেলা সভাপতি ইকবাল কবির জহিদ, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির যশোর জেলা সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক তসলিম-উর-রহমান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার রায়।

মিলন রহমান/এফএ/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।