ভাষা-গৌরবের চেতনায় নিউইয়র্কে `একুশের কবিতা` পাঠ


প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আমাদের ভাষা আমাদের গৌরব। বাংলা ভাষার এই শক্তি বিশ্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। এই চেতনা ও আহ্বান নিয়ে বিশ্বের রাজধানী বলে খ্যাত নিউইয়র্কে `একুশের কবিতা` পাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্লাব সনম এর স্পনসরে এস্টোরিয়ার ক্লাব সনম মিলনায়তনে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় ছিলেন চার অভিবাসী কবি- ফকির ইলিয়াস, শামস আল মমীন , এবিএম সালেহউদ্দিন ও লিয়াকত আলী।

প্রবাসের বিশিষ্ট কবি নুরজাহান কাদের এই অনুষ্ঠানের শুভউদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপরই মহান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এই সময়ের বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস। তিনি বলেন- এটা খুবই আনন্দের বিষয় এই অভিবাসে আজ অর্ধ শাতাধিক কবি কবিতা পাঠ করছেন। রয়েছেন প্রবাসের খ্যাতিমান আবৃত্তিকারবৃন্দ। তিনি বলেন- বিদেশে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটাতে আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে। কবি ফকির ইলিয়াস বলেন- আজ ভাষার মুনাফা অর্জনের সময় এসেছে। এই প্রবাসে যে প্রজন্ম বড় হয়ে নিজ নিজ পেশায় ফিরছে- তাদেরকে বাংলা ভাষার গুরুত্ব বুঝাতে হবে। একজন ডাক্তার কিংবা একজন এটর্নি যখন বলবেন- `আমি বাংলায় কথা বলি` তখন তার পেশাগত দক্ষতা আরও প্রশংসিত হবে। তিনি তার ক্লায়েন্টের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন।

ফকির ইলিয়াস বলেন- ইউরোপ-আমেরিকায় মূলধারার যে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো রয়েছে, সেসব লাইব্রেরিতে প্রতি বছর কয়েকশ বই দান করতে পারে অভিবাসী সংগঠনগুলো। ক্রমশ এসব লাইব্রেরিতে গড়ে তোলা যেতে পারে ‘বাংলাদেশ বুক কর্নার’। এখানে থাকতে পারে বাংলাদেশ বিষয়ে বাংলা, ইংরেজি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাবলী। থাকতে পারে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়ের বিভিন্ন বই। থাকতে পারে বাংলা ভাষার কয়েক হাজার বই। যা পড়ে অভিবাসী বাঙালিরাই শুধু নয়, ভিন্ন ভাষাভাষীরাও জানতে পারবে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতিকে। করানো যেতে পারে অনুবাদের কাজটিও। বিদেশে যারা দক্ষ অনুবাদক আছেন, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে সংগঠনগুলো।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্লাব সনম এর সত্ত্বাধিকারী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক তৌফিক কাদের। তিনি বলেন, আমি আমার প্লাটফর্ম থেকে ভাষা ও সাহিত্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমি দায়িত্বজ্ঞান মনে করি। কারণ আমি যদি এই কাজটি করতে না পারি- তবে আগামী প্রজন্মের কাছে দায়ী থেকে যাবো। তিনি সবাইকে পরবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রথম কবিতাটি পাঠ করেন এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক কবি লিয়াকত আলী।

Akushe

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন প্রবাসের বিশিষ্ট আবৃত্তিকারবৃন্দ। তাঁদের মাঝে ছিলেন- মুজিব বিন হক,লুৎফন্নাহার লতা,জি এইচ আরজু ,ইভান চৌধুরী,আবীর আলমগীর ,সেমন্তি ওয়াহেদ, মিজানুর রহমান বিপ্লব, গোলাম মোস্তফা, ফারুক আজম, সাবিনা শাহরিন নিহার, মিতা কর্মকার, বাহাউদ্দিন পিয়াল,জাফর উল্লাহ মিলন,হোসাইন শাহরিয়ার তৈমুর, আনোয়ারুল লাবলু,শুক্লা রায়,সুমাইয়া সুখ,তাহরিনা পারভীন প্রীতি, কৌসুলী ইমা, মার্ক ওয়াইনবার্গ ।

স্বরচিত কবিতাপাঠে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ছুটে আসেন কবিবৃন্দ। ছিলেন কানাডা থেকে আগত কবিও। যাঁরা কবিতা পাঠ করেন তাঁদের মাঝে ছিলেন- তমিজ উদদীন লোদী, ফকির ইলিয়াস, আনোয়ার সেলিম,নাসরীন চৌধুরী,কামনা হাসান,সুলতানা খানম, ফারহানা ইলিয়াস তুলি,শরিফুল আলম, রওশান হাসান,কামরুন্নাহার ডলি, শামীম আরা আফিয়া, আলম সিদ্দিকী,মেহের চৌধুরী,রুবিনা শিল্পী,সেলিম ইব্রাহীম, আশরাফ হাসান, খান শওকাত, সৈয়দ মামুনুর রশীদ,সাঈদা পারভীন, কাজী দিলরুবা রায়হান,কবির কিরন,নিলুফার রেজা পারভীজ, আম্বিয়া বেগম অন্তরা, লুৎফর রহমান,আফরোজা রত্না ,রেবেকা হক,আবু রায়হান , নুরুল মোস্তফা রইসী, ডা: মেছের আহমেদ,মাকসুদা আহমেদ, সাম্মী আখতার, আবুল বাশার, মাহমুদুল হক চৌধুরী ।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মাঝে ছিলেন- লেখক ফেরদৌ সাজেদীন, গীতিকার জীবন চৌধুরী, সঙ্গীতজ্ঞ আলী ইমাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের, প্রাবন্ধিক আদনান সৈয়দ, কম্যুনিটি লীডার আব্দুল কাদের চৌধুরী শাহীন, সংগঠক শীতেশ ধর, প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন কবি শামস আল মমীন। তিনি বলেন- একুশ আমাদের অহংকার। জাতিসংঘ এই দিনকে আন্তর্জাতিক মতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই অর্জন আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। আমরা যতই বাংলা চর্চা করবো- ততই উপকৃত হবো। কথাটি সবাইকে মানে রাখা দরকার।

অনুষ্ঠান শেষে শিল্পী মনিকা রায়ের আয়োজনে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় সাড়ে চারঘণ্টার এই অনুষ্ঠান মালা। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন কবি এবিএম সালেহউদ্দিন ও কবি ছন্দা বিনতে সুলতান।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।