সেভ দ্য চিলড্রেনের জলবায়ু ক্যাম্পেইন শুরু

জলবায়ু বৈষম্য নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শিশুদের জন্য সেভ দ্য চিলড্রেন শুরু করেছে ‘জেনারেশন হোপ’। শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে এ প্রচারাভিযান শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার লেকশোর হোটেলে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)-এর সহযোগিতায় শিশু ও যুবদের অংশগ্রহণ, উপস্থাপনা এবং জলবায়ু বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে ক্যাম্পেইনটির উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবেও উপস্থিত ছিল এক শিশু। কারণ ক্যাম্পেইনটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সামনের বাস্তবায়ন পর্যন্ত সবকিছুই শিশুদের পরামর্শ নিয়ে করা হয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়েন ফ্রাই বলেন, গত বছর আমি বাংলাদেশে গিয়ে শিশু ও যুবদের অনেক গল্প এবং বক্তব্য শুনেছি। তাদের কাছে আমার জন্য অনেক শক্তিশালী বার্তা ছিল। আমাদের অবশ্যই শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই তাদের অধিকার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, সহিংসতা ও দারিদ্র্য থেকে সুরক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেনারেশন হোপ সেভ দ্য চিলড্রেনের একটি বিশ্বব্যাপী ফ্ল্যাগশিপ প্রচারাভিযান। যার উদ্দেশ্য বিশ্বের ভেঙে পড়া জলবায়ু অবকাঠামো মেরামত করা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও জলবায়ু সংকটের সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলো মোকাবিলার মাধ্যমে শিশু এবং পৃথিবীর যত্ন নেওয়া।
এ প্রচারাভিযানের লক্ষ্য শিশুদের অধিকার ও কল্যাণ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ন্যায্য তহবিল নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলা করা। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন করা এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা।
জেনারেশন হোপ একটি শিশু ও তরুণদের নেতৃত্বাধীন প্রচারাভিযান যা আগামী ৫ বছরের জন্য দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাইল্ড হিয়ারিং সেশনের মাধ্যমে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ৪১টি দেশের প্রায় ৫৪ হাজার শিশুর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যতের জন্য তাদের আশা এবং এ সংকটগুলি সমাধানের জন্য কী করা দরকার বলে তারা মনে করে সে সম্পর্কে আরও জানতে কথা বলেছে।
বাংলাদেশে প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা করার আগে সেভ দ্য চিলড্রেন একই ভাবে সারাদেশের ৬টি জেলা থেকে ১২-১৮ বছর বয়সী ৫২৩৩ জন শিশুর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতামত ও সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি চাইল্ড হিয়ারিং সেশন প্রদর্শিত হয়েছ। সেখানে যে বিবৃতিগুলো এসেছে- আমরা বিশ্বাস করি, অর্থনৈতিক বৈষম্য অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও মেয়েদের প্রভাবিত করে এবং এ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে আরও সমর্থন প্রয়োজন এবং কম সামর্থবান ব্যক্তিদের ওপর এর বেশি প্রভাব পড়ে। আমরা চাই প্রাপ্তবয়স্করা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ শুনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করুক। আমরা চাই প্রাপ্তপবয়স্করা আমাদের গুরুত্ব দিক এবং আমাদের ক্ষমতায়ন বাড়াতে বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নিশ্চিত করা হোক।
চাইল্ড হিয়ারিংয়ে শিশুদের কাছ থেকে সুপারিশগুলো প্রতিধ্বনিত হয়েছে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে, যিনি নিজেই ১২ বছরের শিশু। আফসান মাহমুদ সৈকত বলেন, জলবায়ু সমস্যা সমাধানে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিকল্পনাগুলি সঠিকভাবে প্রণয়ন দিকে নজর দেওয়া দরকার। আমরা চাই প্রাপ্তবয়স্করা অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং শিশুদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে উভয় পক্ষই জলবায়ু সংকট এবং প্রশমনের উপায়গুলির ওপর আলোচনা করেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম জাহানসহ অনুষ্ঠানে অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/জিকেএস