ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ চান পোশাকশ্রমিকরা

দেশে অত্যাবশ্যকীয় সেবা আইনের বিল প্রত্যাহার করে অত্যাবশ্যকীয় সেবা নামে শ্রমিক ধর্মঘট আহ্বানের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে এ আইনের দোহাই দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের যে কোনো আন্দোলন প্রতিহত করা হতে পারে। এ অবস্থায় সংবিধান ও শ্রম আইন স্বীকৃত অধিকার কেড়ে নেওয়ার সুযোগের বিল অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন পোশাকশ্রমিকরা।
সোমবার (১ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশে তারা এ দাবি জানান। ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের ব্যানারে ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে এ শ্রমিক সমাবেশ হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম।
তিনি বলেন, মুনাফালোভী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অমানবিক নিপীড়নের শিকার শ্রমজীবী মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগের ঐতিহাসিক বিজয়ে মে দিবসের জন্ম। যা যুগের পর যুগ বিশ্বের শ্রমজীবী জনগণকে আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৪৯ ধারা অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি হার সুপারিশের বিধান এবং ১৪০ (ক) ধারায় বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নতুনভাবে মজুরি কাঠামো ঘোষণার বিধান রয়েছে।
সুলতানা বেগম বলেন, পাঁচ বছর পর পর মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও মজুরি কাঠামো গঠনের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। বিশ্ববাজারের দোহাই এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ক্রমাগত পণ্যমূল্য বাড়ছে এবং বাড়ি ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর ফলে শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রকৃত মজুরি অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় শ্রমিকরা অপুষ্টি আর কঠিনতম জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পখাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার টাকাসহ মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা জরুরি।
শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার টাকা ঘোষণাসহ সমাবেশে থেকে ৮টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
১) সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য ৬৫ ভাগ মূল মজুরিসহ ২২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা।
২) শ্রমিক সংগঠনের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন প্রণয়ন করা।
৩) আইএলও কনভেনশন-১০২, ১৮৯ ও ১৯০ অবিলম্বে অনুসমর্থন করা।
৪) শ্রমজীবী মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৫) শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সান্ধ্যকালীন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা।
৬) প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসের আইন করা।
৭) আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়া।
৮) বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালায় সন্নিবেশিত শ্রমিক স্বার্থবিরোধী বিধিসমূহ বাতিলপূর্বক নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদিজা রহমান, সহ-সভাপতি মিসেস সুইটি, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দীন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রোজিনা আক্তার সুমি, দপ্তর সম্পাদক রাবেয়া ইসলাম, মিরপুর আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. তাহেরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন, সংগঠক জোসনা বেগম, সালমা বেগম, রোকসানা, আমেনা ও সোনিয়া প্রমুখ।
আরএসএম/এমকেআর/জিকেএস