পুরোনো ফরম্যাটেই নির্বাচনকালীন সরকার!

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো রয়ে গেছে ধোঁয়াশা। কেমন হবে এই সরকার? কারা আসছেন নির্বাচনকালীন সরকারে? আকারে হবে কেমন? নাকি রাজপথের বিরোধীদলের দাবি মেনেই হবে নির্বাচনকালীন সরকার? এসব প্রশ্নের এখনো সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি।
তবে ক্ষমতাসীনরা বরাবরই এ বিষয়ে কথা বলছেন। তাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। কিন্তু বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
২৫ মে কাতারে ইকোনমিক ফোরামে (কিউইএফ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার সমুন্নত রেখে আমাদের সরকারের (আওয়ামী লীগ সরকার) অধীনে অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন: কাটছে না সংকট, নির্বাচন কি পুরোনো পথেই?
তবে প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে। এর ফরম্যাটই বা কী। কতজন সদস্য থাকবেন ইত্যাদি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচনেও একই প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন হবে। তেমন ব্যতিক্রম কিছু হবে না। আগের মতোই আকারে ছোট হবে। তারা রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি যে, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা করেন যে, নির্বাচনকালীন সরকারে আসতে চান আমরা নিতে রাজি আছি। আগেও আমরা নিয়েছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসায় বিধিনিষেধ
তবে বিষয়টি নিয়ে খোদ ধোঁয়াশায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতারাও। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোরও হাল একই। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু তা কেমন হবে, কীসের ভিত্তিতে হবে আমরা জানি না।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা তো আমাদের জানা নেই। না জেনে কী বলবো? উনি বলেছেন যা, ওই পর্যন্তই। এর বাইরে আমাদের কিছু জানা নেই। কোন পরিপ্রেক্ষিতে, কিসের ভিত্তিতে উনি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন, এসব জানলে পরে জানাবো। এতে আমাদের আগ্রহ আছে কি না তাও জানাবো।
আরও পড়ুন: এ সরকারের অধীনেই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে: প্রধানমন্ত্রী
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের পৌনে দুই মাস আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকার। সেখানে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে মোট সদস্য ছিলেন ২৯ জন। ১০ জন ছিলেন উপদেষ্টা। তখন ওই সরকারকে বলা হচ্ছিল সর্বদলীয় সরকার। এরপর একই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সরকার গঠন করা হয়। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বরাবরের মতোই হবে নির্বাচনকালীন সরকার। আকারে ছোট হবে। তারা রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। তবে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে যে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে রাখা হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বাধা দিলে বিরোধীরাও ভিসা পাবে না: ডোনাল্ড লু
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দলের থাকার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালেও অন্য দলকে অ্যাকোমোডেশন করেছিলেন। ২০১৮ সালেও তিনি অফার করেছিলেন। এবারও সেই সুযোগ ছিল। কিন্তু বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়নে তারা সংসদ থেকে তাদের প্রতিনিধিত্ব সরিয়ে নেয়। ফলে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দল থেকে মন্ত্রী বানানোর সুযোগ থাকলেও বিএনপিকে অ্যাকোমোডেশন করার সুযোগ নেই।
জাতীয় সংসদের হুইপ জানান যে, সরকার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে উদার।
এসইউজে/জেডএইচ/জেআইএম