সংসদীয় কমিটির অভিযোগ
নিম্নমানের গুঁড়া দুধ সরবরাহ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো

বেসরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ সরবরাহ করে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ কিনে তাতে ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে সরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করে। এ বিষয়টি জনসাধারণকে জানানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসে কমিটির বৈঠকে।
রোববার (৪ জুন) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, মো. শাহে আলম এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। রোববারের বৈঠকে ওই আলোচনার বিষয়টি কার্যবিবরণী আকারে উত্থাপন করা হয় এবং পরে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, আগের বৈঠকে কমিটির সদস্য সরকারি দলের এমপি শাহে আলম বলেন, বেসরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে কম দামে নিম্নমানের দুধ ক্রয় করে। নিম্নমানের গুঁড়া দুধ ৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করে তা মিশিয়ে বাজারে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করে থাকে।
আরও পড়ুন>> খাদ্যে ভেজালকারীর মৃত্যুদণ্ডের আইন করা দরকার: শিল্প প্রতিমন্ত্রী
বৈঠকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য জানান, মিল্ক ভিটার প্রোডাক্টস শতভাগ পিওর। এখানে ভেজালের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বেসরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দেশি-বিদেশি নিম্নমানের দুধ কম দামে কিনে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করছে।
বিষয়টির সুষ্ঠু মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশ থেকে ৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে তারা নিম্নমানের দুধ ক্রয় করছে। আমদানিকৃত দুধের ওপর ১০-১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন প্রতিমন্ত্রী।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের দুধ কম দামে কিনে কন্ট্রামিনেশন (ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে) করে বাজারে বিক্রি করছে, যা জনসাধারণকে জানানো দরকার।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব বলেন, মিল্ক ভিটার বর্তমানে ৪ লাখ লিটার দুধ প্রসেস করার ক্যাপাসিটি রয়েছে। মিল্ক ভিটা গড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে দুধ সংগ্রহ করে। কিন্তু খামারিরা খোলা বাজারে দুধ বিক্রি করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০-৯০ টাকা লিটারপ্রতি পায়। এ কারণে মিল্ক ভিটার দুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে। আবার ৫০ টাকার বেশি মূল্যে দুধ কেনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে ১০০ টাকা লিটার মূল্যেও পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন>> ফল-শাকসবজিতে ফরমালিন নেই: নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ)
জানা গেছে, রোববারের বৈঠকেও মিল্ক ভিটা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় খামারি পর্যায়ে দুধের দাম বাড়ানোর জন্য ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার দাবি করেন মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু। তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, সরকার এখন সব খাত থেকে ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এসময়ে নতুন করে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। পরে বৈঠকে মিল্ক ভিটাকে জনপ্রিয় করার অনুশাসন দেওয়া হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে মিল্ক ভিটার মানোন্নয়নের ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগণের কাছে মিল্ক ভিটাকে আরও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে ওয়াসার চলমান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা, কম খরচে বেশি মানুষের কাছে পানি পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ভারী যানবাহন চলাচলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে একটি পরিপত্র জারির সুপারিশ করা হয়।
এইচএস/ইএ/জিকেএস