চট্টগ্রামে চুক্তিতে চলে ৯৮ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা
চট্টগ্রামে মিটার ছাড়া চুক্তিতে চলে ৯৮ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা। এরপর ৮৭ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা অতিরিক্ত বকশিশ দাবি করে যাত্রীদের কাছে। যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যায়না ৮৫ শতাংশ সিএনজি। মিটার লাগানো ছাড়া চলাচল করছে ৩৩ ভাগ সিএনজি আর ২৮ শতাংশ সিএনজি অটোরিক্সার মিটার থাকে নষ্ট।
রোববার চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পটে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২০ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, শাহ আমানত ব্রিজ, কালুরঘাট, চকবাজার, লালদিঘী পাড় এলাকায় সংগঠনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি আয়োজিত ‘সিএনজি অটোরিকশা’ মিটারে চলাচল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়।
পর্যবেক্ষণ শেষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে উপরোক্ত অভিযোগ অভিযোগ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষক দল।
তবে তাদের এ দাবি প্রত্যাখান করে সিএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসউদুল হক বলেন, মিটারে সিএনজি চলাচল নিশ্চিত করতে নগরীর প্রতিটি মোড়ে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের একাধিকবার বলা হয়েছে কোনো অটোরিকশা মিটারে যেতে না চাইলে নিকটতম পুলিশকে জানাতে। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় না। নগরীতে চলাচলকারী ৮০ ভাগ অটোরিকশায় মিটার লাগানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ সময় যাত্রীরা চালকের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় সিএনজিতে যাতায়াত করে। ফলে এসব সিএনজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও যায়না।
নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রী সাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত সিএনজি অটোরিকশা। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত হয় এ বাহনটি। কিন্তু হঠাৎ করে মালিক, চালক, সরকার মিলে যাত্রীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এক লাফে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়েও এই সেক্টরে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়; মালিক-চালকদের মনোপুত ভাড়া ১ নভেম্বর ২০১৫ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে দুই দফা সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে অটোরিকশা মিটারে চলাচল ও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যাতায়াত নিশ্চিত করার কথা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বার বার সময় বাড়ানোর পরেও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। যায়না যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যেও। এ সেক্টরটিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি নিয়ে যাত্রী সাধারণের অভিযোগের অন্ত নেই।
বিষয়টি নিয়ে যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিযোজিত সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাজ শুরু করেন। তারা নগরীর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলাচল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠে নামে। এ সময়ে ৩৬২টি অটোরিকশা, ৩৮৪ জন যাত্রী ও ৩৬২ জন চালকের সঙ্গে কথা বলেই এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।
পর্যবেক্ষণকালীন দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৯৮ ভাগ চুক্তিতে চলাচল করে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার ৮৭ শতাংশ ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ দাবি করে। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৫ ভাগ অটোরিকশা।
এছাড়াও পর্যবেক্ষণকালে প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী বহন এবং চট্টগ্রাম জেলার অটোরিকশা বেআইনিভাবে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় প্রবেশ করে ৩৩ শতাংশ গাড়ি মিটারবিহীনভাবে চলাচল করতে দেখা গেছে।
এসকল অনিয়ম প্রতিরোধে পর্যবেক্ষণকালীন সময়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওই এলাকায় বিআরটিএ বা অন্যকোন সংস্থার কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি বলেও উল্লেখ করেন সমিতির নেতৃবৃন্দ।
পর্যবেক্ষণকালে যাত্রীরা ইদ্রিস নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তাদের পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চুক্তিতে যাতায়াত করলে মিটারের চেয়ে কম মূল্যে যাতায়াত করা যায় বলে যাত্রী ও চালক প্রতিনিধি দলের কাছে অভিযোগে জানান।
তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ, বর্ধিত ভাড়ার হার কমিয়ে পুনরায় ভাড়া পুনঃনির্ধারণেরও দাবি জানান।
তাদের পর্যবেক্ষণকালে প্রতীয়মান হয় যে, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় এই বাহনের সংখ্যা কম। ফলে চালকদের ইচ্ছার কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও চুক্তিতে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীরা।
এদিকে অতিরিক্ত দৈনিক জমা ও আনুষঙ্গিক খরচের পুরোটাই যাত্রীদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে যাত্রী সাধারণ অভিযোগে করেন সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে।
এসএইচএস/আরআইপি