টিআইবির গবেষণা

মানিকগঞ্জে মশা নিধনে ৩ জন, লক্ষ্মীপুরে বাড়িপ্রতি খরচ ৬ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

মানিকগঞ্জ জেলায় মশা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনবলের সংখ্যা মাত্র তিন জন। আর লক্ষ্মীপুর জেলায় মশা প্রতিরোধে খরচ মাত্র ৬ টাকা। চলতি বছর ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১ হাজার ২৯৫ জন। তন্মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশই নারী। নারীদের মধ্যে বিলম্বে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহণের প্রবণতা এই অধিক মৃত্যুর কারণ।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে গবেষণা করে টিআইবি। সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু সংকট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে টিআইবির গবেষকরা জানান, আলোচ্য সময়ে বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ১০০ টাকার স্যালাইন ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে একজন জটিল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৪২ টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে রোগীর স্বজনদের। সরকারি হাসপাতালে সংকট থাকায় ১০ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন> ডেঙ্গুর প্রকোপ/ মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে: টিআইবি 

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মশা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে হোল্ডিং প্রতি সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ২৩৬ টাকা খরচ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা মাত্র ৬ টাকা, ফরিদপুর জেলা ১০ টাকা, মানিকগঞ্জ জেলা ৫৮ টাকা খরচ করেছে। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি জনবল রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯৭৫ জন। সবচেয়ে কম মানিকগঞ্জ জেলায় মাত্র ৬ জন। আর বছরজুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় মাত্র ৮ টি ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

চলমান পরিস্থিতির উন্নয়নে ২১টি সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। যার মধ্যে রয়েছে মশা প্রতিরোধ ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন, বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণ, মশা নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার, ডেঙ্গুবিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি, মশক নিধন কার্যক্রমে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ বেশ কয়েকটি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগটি ছিল ঢাকা কেন্দ্রিক। সেটি সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। এটি এখন আর মৌসুমভিত্তিক নেই। বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের ডেঙ্গুর অভূতপূর্ব বিস্তার, আক্রান্তের ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক ভাবে প্রায় শীর্ষ পর্যায়ে থাকার পরেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রাধান্য পায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের নির্লিপ্ততা ও সরকার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীন বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আইনগত ভাবে তারা সেটা অবজ্ঞা করেছেন। আইন অনুযায়ী, স্বাস্থ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ওপর এই ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, এটি তাদের দায়িত্ব না। এটা অনৈতিক ও অবিবেচক। দায় যাদের তাদের যেহেতু জবাবদিহিতায় আনা হ য়না। তারাই যেহেতু সব সুবিধা অর্জন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠ থাকতে পারে। জবাবদিহিতার কাঠামো নেই, সেজন্যই তারা এসব কথা বলতে পারেন।

এসএম/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।