নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করছেন তৃণমূলের নারী নেত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩

তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আছে সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতাও। বাল্যবিয়ে, নারীর প্রতি সহিংসতা, পারিবারিক নির্যাতন এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যসহ নানা রকম বঞ্চনার শিকার নারীর পাশে দাঁড়াচ্ছে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক।

গত ৫ বছরে (২০১৯-২০২৩) দেশে সংঘটিত ৬ হাজার ৮২১টি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে অনেক ভুক্তভোগীকে সহযোগিতা করেছে সংগঠনের সদস্যরা। তৃণমূলের নারী নেত্রীরা মনে করেন, এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে সহযোগিতা পেলে তারাও এগিয়ে যেতে পারে। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ ও অপরাজিতাদের অভিজ্ঞতা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সহ আহ্বায়ক ও খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রোখসানা খন্দকার। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ খলীকুজ্জমান আহমদ ও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের হেড অফ কো-অপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাবিনা ইয়াসমিন লুবনা, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন মনি, জাতীয় অপরাজিত নেটওয়ার্কের সদস্য সেলিনা আক্তার পিয়া, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ঝালকাঠি সদরের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় নেটওয়ার্ক বরিশালের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান সোনালী, সিলেটের মিনা বেগম, খুলনার বন্দনা রায়, পিরোজপুরের ফাহমিদা বেগম মুন্নি, রাজশাহীর রেহানা খাতুন, দিনাজপুরের জেসমিন পারভীন রিভা প্রমুখ।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সীতাকুণ্ডের ইউপি সদস্য নার্গিস বিনতে ইসলাম। প্রবন্ধে বলা হয়, গত ৫ বছরে দেশে বহুমাত্রিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ৬ হাজার ৮২১ জন নারী। এদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার শিকার ৩৪২৮ জন নারী, হত্যা করা হয়েছে ৭৫ জন, ধর্ষণের শিকার ৯৯ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৯১ জন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার ৩৯২ জন, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ৪৮২ জন নারীর। জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে নির্যাতনের শিকার ৫৪২ জন, একাধিক বিয়ে হয়েছে ১৩১ জন নারীর। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৪৮২ জন কন্যাশিশুর। ৮ জন নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার। এছাড়া বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫১২ জন নারী। গত ৫ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্যরা।

নার্গিস বিনতে ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে, নিজ এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ের একজন নারী নেত্রী হিসেবে এটা আমি অনুভব করি যে নারীর প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আকারে বিদ্যমান সহিংসতার অবসান না ঘটলে নারীদের যথাযথ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা নারী নেতৃত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। একই সাথে নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য দরকার নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।

অর্থনীতিবিদ খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এ দেশের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সাম্য মানে সমান নয়, তার অধিকারপ্রাপ্তি এবং তার সব মানবাধিকার নিশ্চিত করা। এ রকম সমাজ আমরা চাই। সংবিধানেই কিন্তু এটা বলা আছে। অতএব এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে রোখসানা খন্দকার বলেন, যদিও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে, তারপরও নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী নির্যাতন পক্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আপনাদের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, এখনো আমাদের অনেক করার বাকি আছে।

নিলুফার ইয়াসমিন মনি বলেন, কোনো নারীই আলাদা নয়। সবাই এক। কারো কারোর যুদ্ধটা হয়তো একটু কম। কিন্তু দুই একজনের অবস্থা দিয়ে সবাইকে বিবেচনা করলে চলবে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের এখানে এসেছেন, এটা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের বড় অর্জন।

জানা গেছে, দেশের ছয়টি বিভাগের মোট ৯ হাজার অপরাজিতা নিজ নিজ এলাকায় নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায় ও নির্যাতনের নানান ঘটনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

আইএইচআর/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।