ব্যাংকের চেক জালিয়াতি চক্রের ৭ সদস্য আটক


প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

অভিনব কায়দায় বিভিন্ন ব্যাংকের চেক জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় মহিলা সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জালিয়াতি চক্রের ৭ জন আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বুধবার ভোর রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল আভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা, বারিধারা এবং বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের আটক করেছে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমান চেক ও চেক জালিয়াতির আনুসাঙ্গিক সামগ্রী উদ্ধার করে র‌্যাব-১ সদস্যরা।

আটকরা হলেন- ব্যাংকের চেক জালিয়াতি চক্রের প্রধান মো. জাকির হোসেন (৪১), মোসা. সোনিয়া আক্তার (২০), মো. আল-আমিন ওরফে সুমন (২৬), মো. রিজভী খায়ের (৩৭), মো. আবুল কালাম শেখ (৫৮), আবুল কাশেম প্রমানিক স্বপন (৩৮) এবং মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহেল (৩৬)।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় র‌্যাব হেড কোয়াটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উয়িং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, ৩টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ২০০টি চেকের মূল পাতা, ১০২টি ব্যাংক চেকের ফটোকপি, ২৮৬টি স্টেটমেন্ট পাতা, ১১৪টি হিসাব খোলার ফরম, ১০টি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সীল এবং চেক জালিয়াতির আনুসাঙ্গিক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাংকে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

জাকির হোসেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ৪০৭/৯ ডিওএইচএস, বাড়ীধারায় “হোসেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল” নামক একটি প্রতিষ্ঠান এর অফিস হিসেবে ভাড়া নেয় এবং এ প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে মোসাঃ সোনিয়া আক্তার তার অফিস সহকারী এবং হারুন-অর রশীদকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেন।

তিনি বলেন, এই চক্রের সদস্যরা মুলতঃ যে কারো স্বাক্ষর স্ক্যানিং করে জাল চেক তৈরি করতো। প্রতারক চক্রের অন্যতম মহিলা সদস্য সোনিয়া আক্তার লিপি ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর “হোসেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে” অফিস সহকারী হিসেবে ৬ হাজার টাকা বেতনে যোগ দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির হোসেনের খুব বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন।

জাকির হোসেন কর্মরত অবস্থায় সোনিয়াকে চেক জালিয়াতির কাজে চেকের উপর এম.আই.সি. আর লেখা/নম্বর কিভাবে সুকৌশলে ব্লেড দিয়ে উঠানো এবং নতুন নম্বর প্রতিস্থাপনের কাজ শিখিয়ে দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সংগ্রহকৃত চেকের ফটোকপি এবং বিভিন্ন নামে করা ব্যাংক একাউন্টগুলোর চেকের উপরের এম.আই.সি.আর লেখা নম্বরগুলো ব্লেড দিয়ে ঘষে উঠানোর কাজ করত।

মোসা: সোনিয়া আক্তার নিজের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ১৪-১৫টি ব্যাংক একাউন্ট আছে। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, একাউন্ট খোলা এবং চেক সংগ্রহের কাজে চক্রের অন্যান্য সদস্য স্বপন, সোহেল, রিজভী, আবুল কালাম ও আল-আমিনের সাথে পরিচয় হয়।

প্রতারক চক্রের আরেক অন্যতম সক্রিয় সদস্য মো. আল-আমিন এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানীর ডাচ বাংলা ব্যাংক গুলশান শাখায় পিয়ন হিসেবে কর্মরত থাকায় গুলশান শাখার ডাচ বাংলা ব্যাংকে জাকিরের সাথে পরিচয় হয়।

আল-আমিন ঐ ব্যাংকের চেকের ক্লিয়ারিং এর কাজ করত এবং জাকিরের অনুরোধে চেক ক্লিয়ারিং পাতার ফটোকপি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করত। এই প্রতারকচক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহেল ২০০৮ সাল থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছে। প্রায় বছর দুয়েক পূর্বে ডাচ বাংলা ব্যাংক এলিফেন্ট রোড শাখায় হিসাব খোলার সুবাদে জাকিরের সাথে পরিচয় তার।

এছাড়া ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে পরিচিত ছিল এবং চেক জালিয়াতিতে বিভিন্ন রকমের তথ্য প্রদান করে সহায়তা করত।

আবুল কাশেম প্রমানিক স্বপন ২০০৭-২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংক এক্সিকিউটিভ (লোন শাখা) হিসেবে কর্মরত ছিল। কর্মরত থাকা অবস্থায় একজন গ্রাহক হিসাবে জাকিরের সাথে পরিচিত ছিল।

সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি মূলত: বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একটি নির্দিষ্ট একাউন্টকে টার্গেট করত এবং কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তা হতে এই সংক্রান্ত তথ্য নিত।

যে সকল প্রতিষ্ঠানের লেনদেন বেশী এবং দেশের বাইরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি যাদের অনেকেরই একাউন্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মূলত: এমন শ্রেণির লোকের একাউন্টই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের সাথে বিভিন্ন ব্যাংকের বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই প্রতারক চক্র চেক জালিয়াতি করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আটকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।