চলে গেলেন ইতিহাসের সাক্ষী ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক

জান্নাতুল বাকেয়া কেকা
জান্নাতুল বাকেয়া কেকা জান্নাতুল বাকেয়া কেকা , লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, এবং গবেষক ও লেখক।
প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

চলে যাচ্ছের ইতিহাসের সাক্ষীরা!
বাতিঘর আজ নিবু নিবু! কাণ্ডারি হবেন কে? ইতিহাসের ধারবাহী-ভারবাহী প্রজন্ম তৈরি হয়েছে কি? কিংবা আদৌ কেউ আছেন কি? ইতিহাস বিমুখ বাঙালির, জাতিসত্তার পরিচয় ভোলাতে দেশি বিদেশি প্রলোভন, অবাধ হস্তক্ষেপ, সুযোগ-সুবিধার ছড়াছড়িতে একটি জাতির কয়েক প্রজন্ম ব্যস্ত, যারা নিজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের চেয়েও আত্মস্বার্থের ঘোরতর মোহে আচ্ছন্ন সেই তারা কি হতে পারেন ইতিহাসের ধারক-বাহক?

হালের বাস্তবতায় বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়ের জন্মগর্ভ ঐতিহাসিক ও মহান একাত্তরের সম্মুখ সমর আর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেভাবে পথভ্রষ্টতা ও বিকৃতির ছড়াছড়ি দেখেছি তাতে তো ভরসার কোন কাঁধ দেখিনি। যাদের ওপর নির্ভার থাকবে এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য?

রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্যও যেভাবে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে সেখানে শক্ত ও শক্তিশালী বোধের অসীমে প্রাণমন লয়ে লড়াকু সৈনিকের দেখাও কম মিলেছে! এদেশেন জন্মেন সূচনায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধার ইস্যুতে যেভাবে ইতিহাস বিকৃতির নয়া নগ্নতা দেখেছি তাতে ভরসা করা যায় এমন তরুণ মেধাবী মুখ দেখিনি কেন? যে দুই-একজন ফ্রন্টে এসেছেন তারাও নাকি ভাড়াটে খেলোয়াড়! বিস্মিত হই পরিস্থিতি কি বরফ খণ্ডের জলে ভাসার সেই ফর্মুলার ন্যায়-তিনভাগ অদৃশ্যমান তবে বৃহৎ শক্তি? বাকি মাত্র দৃশ্যমান এক ভাগ
যারা এদেশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্য ধারণ বা লালন করেন? তবে তো পরিস্থিতি ভয়ংকর?

হালের বিরূপ বাস্তবতায় আমাদের চেতনার বাতিঘর ডা আহমদ রফিকের মত বহুমুখী গুণীজনের প্রস্থান হয় তখন আমরা শঙ্কিত হই। আমাদের চেতনার বাতিঘরে উজ্জীবিত করার সেই ইতিহাসের বাঁকে প্রত্যক্ষ সাক্ষীরা আজ হারিয়ে যাচ্ছেন কালের গহ্বরে তখন যে কোনো জাতির মত বাঙালি জাতিসত্তার মানুষের টিকে থাকার মূলমন্ত্র "অমর একুশ" হয়ে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের চেতনার লালন ধারণ করবে কে? বিস্মৃত এই জাতির ললাটে কি সেই তিলক যুক্ত হবে যে বাঙালি এক ইতিহাস বিমুখ জাতি?

মনে বলে বিশ্বাসে চাই, অদৃশ্যমান সেই তিন ভাগই হোক ইতিহাস মনস্ক, ইতিহাসের ধারক-বাহক! তবে সময়ের সাহসী সন্তান না হলে লাভ কি? কেননা চোরকাটার ন্যায় লুকিয়ে থাকার কঠিন কঠোর পরিস্থিতির সুযোগে ক্রমশ শক্তিশালী বর্ণচোরা মোনাফেকের শক্তিমত্তা তলেতলে গভীর জলে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ফেলেলে তারুণ্যের মনস্ত্বাপে! এদেশের জন্ম বেদনার অতীত আর ঐতিহাসিক সব ডকুমেন্ট দখলে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট ইতিহাস পাঠের চর্চায় মেতে ও মাতিয়ে এক ইতিহাস বিমুখ তারুণ্যের বিশাল অংশকে দেশ বিরোধী শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করো তুলেছে!

চলে গেলেন ইতিহাসের সাক্ষী ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক

হালের বাস্তবতায় কঠিন এক উপলব্ধি এদেশের জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্য বাঙালিত্বের নানান সৌরভ-নিদর্শনে অভিভূত হবেন কোন প্রজন্ম। সবাই তো ভিন্ন দেশী এজেন্টদের কবলে পরে শুধুই আত্মউন্নয়নের তসবি জপছে? ইউরোপ আমেরিকা পাড়ি দিতে সে সব দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি চারু-কারুর মোহে নিজ দেশের ইতিহাস ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট সবটাই তারা ত্যাগ করছে!

চেতনা বিক্রির ব্যবসায়ীরা তলে তলে নিজ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে এত রকমের সুযোগ সুবিধা আর চেতনা বিক্রি করে লাভবান হয়েছে যে আরেক অংশের মানুষেরা একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছে। আরো মজার বিষয় চেতনা বিক্রির ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই এদেশ-এদেশের স্বাধীনতা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী হয়েও চেতনা বিক্রির মূল কারিগর ছিলেন? একারণে সাধারণ জনমানুষ আর স্বাধীনতার সত্যিকারের পক্ষশক্তির ধারক-বাহক তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক মানুষ চেতনা বিক্রির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে খোদ একাত্তর, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনাস্থাশীল হয়েছে!

এই পরিস্থিতি যদিও সামরিক মান-অভিমানের! তবে ভয় এখানে যে, ইতিহাস বিমুখ বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় ভোলাতে একটি পক্ষ অতীতের দীর্ঘ সময় তলে তলে সকল ধরনের রসদ অর্থ কড়ি কামিয়ে আজ এতটা শক্তিশালী যে তাদের ফাঁদে ধরা দিয়েছে তরুণ প্রজন্মের বিপুল সংখ্যা। এর সাথে যুক্ত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের এদেশী ও ভিন্নদেশীয় শক্তিশালী এজেন্টদের। এই দেশী ও ভিন্ন দেশের চক্রটি নানান প্রলোভনের নীল নকশার জালে জড়িয়ে এদেশের স্বাধীনতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য সবকিছুকে মামুলি গণ্য করে শুধু আত্মপ্রেমে মগ্ন এক প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছে! এই সাফল্যের হাত ধরে ষড়্‌যন্ত্রকারীরা আজকাল গোপনে না প্রকাশ্যেই মেতেছে এদেশের স্বাধীনতা ও একাত্তরের ইতিহাস ও চেতনা নিধনে।

হালের বিরূপ বাস্তবতায় আমাদের চেতনার বাতিঘর ডা আহমদ রফিকের মত বহুমুখী গুণীজনের প্রস্থান হয় তখন আমরা শঙ্কিত হই। আমাদের চেতনার বাতিঘরে উজ্জীবিত করার সেই ইতিহাসের বাঁকে প্রত্যক্ষ সাক্ষীরা আজ হারিয়ে যাচ্ছেন কালের গহ্বরে তখন যে কোনো জাতির মত বাঙালি জাতিসত্তার মানুষের টিকে থাকার মূলমন্ত্র "অমর একুশ" হয়ে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের চেতনার লালন ধারণ করবে কে? বিস্মৃত এই জাতির ললাটে কি সেই তিলক যুক্ত হবে যে বাঙালি এক ইতিহাস বিমুখ জাতি? তবে এজাতির মুক্তির ও মন্দিরে সোপান তলে কে হবে সেই কাণ্ডারি আর আমরা কি সেই ইতিহাসের ভারবাহী নয়া প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছি? না পারার ব্যর্থতার দায় কার?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক গবেষক।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।