নুসরাতরা কেন ঝলসে যায়?

এই নুসরাত; তুই মরলি কেন? সব দোষতো তোর। জানিসনা তুই জন্মেছিস বাংলাদেশে? যৌন নিপীড়ন হয় এদেশের ঘরে ঘরে। প্রতিবাদ করেছিস তাই ওরা তোকে শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারলো।
মারে তুই কেন প্রতিবাদী হতে গেলি? এদেশে ওসব মানায় না। প্রতিবাদ করলি আর তোকে জীবন দিতে হলো। তোকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় ঢের লেখালেখি হচ্ছে। মিডিয়ার শীর্ষ শিরোনাম হচ্ছিস তুই। তুই এখন এদেশের শীর্ষ সেলিব্রেটিদের একজন। এভাবে ক’দিন বেশ চলবে। আবার সবাই তোকে ভুলে যাবে।
বিচার? এ নিয়ে আমি, আমরা সবসময় শংঙ্কিত। তুই বল ক’টা যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনের বিচার হয় এদেশে? তোর হত্যাকারীরা ইসলামের সুন্নতী লেবাস পরে আছে তাই তুই মাদ্রাসার ছাত্রী হলেও তোর ব্যাপারে প্রতিবাদী হচ্ছে না আলেম সমাজ। সোচ্চারতো দেখিনা সুশীল সমাজকেও।
সবাই সোচ্চার হলে ওরা যৌন নিপীড়ন আর হত্যা করার সাহস পায় কি করে? মারে তোর ভাগ্য বড্ড ভালো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোর বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। হয়তো তোর খুনের বিচার হলে হতেও পারে। ভাগ্যাহততো এদেশের শতশত নারী।
ওভাই, তুই কেন মরলি? সব দোষতো তোর। দোষ তোর ক্ষত বিক্ষত লাশের!! তোকে কে বলেছে রাস্তায় বের হতে? জানিসনা রাস্তায় ‘রাস্তার দানব’ থাকে? মানুষ পিসে মারে দানবেরা। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হুঁশ ছিলো না তোর? নির্ঘাত মরবিইতো? তুইই বলনা, এ ভুলের কি আর ক্ষমা আছে?
এই ব্যাটা, তোকে কে বলেছে বহুতল ভবনে যেতে? জানিসনা ওসব ভবনের তো বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। যেখানে নেই কোন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। বহির্গমন পথও পর্যাপ্ত নেই। নেই অন্য কোন নিরাপত্তাও। আগুন লাগলেতো তোর গা ঝলসে যাবেই। তুই অঙ্গার হবি এটাইতো স্বাভাবিক। ওরো সোনা ভাই তুই মরে গেছিস বেঁচে গেছিস।
অকালেই তুই ক্যান্সারে মরে গেলি? কিডনি কিংবা ফুসফুস তোর অকেজো হয়ে আছে। হবেইতো? মরবিইতো তুই? তোর ক্যান্সার হবে নাতো কার হবে? তুই যে এদেশেরশই গর্বিত নাগরিক!! বিষ মিশানো খাবার তোকে কে গিলতে বলেছে? ক্যান্সারের উপাদানগুলোতো প্রতিদিন গিলে গিলে খাচ্ছিস তুই। তাহলে তোর রোগবালাই হবে নাতো কার হবে? তুই মরবি নাতো ভুটান, কানাডা, ফ্রান্সের মানুষগুলো মরবে? মরে গেছিস ভাই; ভালই হয়েছে। তা না হলে আর কত ধরনের বিষ যে তোকে গিলতে হতো আল্লাহ মালুম!!
এই মেয়ে তুই ধষিতা? ধর্ষণ করে নরকীটেরা তোকে হত্যা করেছে? বেশ করেছে। জানিসনা এদেশে ধর্ষকরা ঘরে রাস্তায় অফিসে এমনকি বাসে ট্রাকেও ওঁৎ পেতে থাকে?
আজকের আলোচ্য বিষয় ছিলো (১) সড়ক দুর্ঘটনা, (২) ধর্ষণ, (৩) খাদ্যে ভেজাল, (৪) অগ্নিকাণ্ড (৫) নুসরাত হত্যা। এগুলো রোধ হওয়া দরকার। ৫টি বিষয় নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার প্রশাসনকে অনেক বেশি সৎ এবং আন্তরিক হতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে।
আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সহসাই সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। নুসরাতরা ঝলসে যাবে না, খুন হবে না। নারীরা ঘরে বাইরে নিরাপদ থাকবে। আমরা খাদ্য পাবো ভেজাল মুক্ত। কাউকে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হতে হবে না। আর এমন দিনের অপেক্ষায়ই রইলাম আমরা।
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/এমএস