কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ২১ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসচেতনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আদেশ না মানলে জেল-জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আদেশ না মানায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। দেশ-জাতির স্বার্থে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে নতুন করে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী এবং তারা একই পরিবারের সদস্য। সবমিলিয়ে দেশে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়াল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইতালিফেরত করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে থাকায় একই পরিবারের এই তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন।‘তিনি আরও জানান, আইসোলেশনে রয়েছেন ১৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন তিনজন।

দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে বেশ কটি মন্ত্রণালয় নিয়ে ব্রিফ করেছি। সতর্কতা মেনে চলছে না। কঠোরতা নেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মেসেজ (বার্তা) দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে। কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃংখলা বাহিনী। সতর্কতার পত্র পাঠানো হয়েছে।’

চিকিৎসক-নার্সদের উদ্দেশে বলেন, ‘কিৎসক ভাইবোনদের অনুরোধ করব-এটা জাতীয় দুর্যোগ। ৯ লাখ নিরাপত্তা পোশাক সরবরাহ করছি। জাতির স্বার্থে মানবতার স্বার্থে সেবা কাজ থেকে বিরত থাকবেন না। সেবা দেবেন। চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে অধিদফতর।’ বাংলাদেশে প্রথম একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। বুধবার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পাঁচ ধরনের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এগুলো হচ্ছে- এক. ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া। দুই. হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা। তিন. হাঁচি–কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা। চার. অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শে না আসা। এবং পাঁচ. মাছ, মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া।

করোনাভাইরাস যাতে না ছড়ায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণত তিন রকমভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়। এগুলো হচ্ছে- এক. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি–কাশির মাধ্যমে। দুই. আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে ছড়ায় তিন. পশু, পাখি বা গবাদিপশুর মাধ্যমে ছড়ায়।

করোনা একধরনের সংক্রামক ভাইরাস। ভাইরাসটি পশু-পাখি থেকে সংক্রমিত হয়ে থাকে। চীনসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশে বর্তমানে (মার্স ও সার্স সমগোত্রীয় করোনাভাইরাস) এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। কেউ যদি এসব দেশ ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে, গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে তার করোনাভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের নিচের নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫।

সচেতনতাই পারে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গুজবে কান দেয়া যাবেনা। করোনার প্রভাবে মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন অযথা মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। করোনাভাইরাসের আক্রমণের সুযোগে কোনো অবস্থায়ই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোসহ অন্যান্য জনবিরোধী কাজ করা যাবেনা। আমরা চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠুক।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।