দাম কমান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহ বাড়ান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ১০ জুন ২০২০

করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য এ সময় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আর এ সুযোগে দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। এ অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়ছেন মানুষজন। প্রয়োজনে যেন রোগীরা অক্সিজেন পান সেটি নিশ্চিত করাটাই এখন জরুরি।

এ-সংক্রান্ত খবর থেকে জানা যায়, বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকটে পড়েছেন সবাই, প্রায় পাঁচগুণ দাম বেড়ে মাঝারি মানের একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ তিন মাস আগেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের এই সেট পাওয়া যেত পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায়।

সাধারণ রোগীর শরীরে অক্সিজেনের উপস্থিতি ৯০ শতাংশের নিচে নামতে শুরু করলেই অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। পালস অক্সিমিটার নামে একটি সহজ ডিভাইসের মাধ্যমে অক্সিজেনের শতকরা উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। অক্সিজেন যদি ৮০ শতাংশ বা এর আশপাশে থাকে তখন বাসায় রেখে অক্সিজেন দিয়েও সংকট মোকাবিলা করা হয়। আর এর চেয়েও কমে গেলে তখন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হবে।

একদিকে যাদের প্রয়োজন তারা অক্সিজেন পাচ্ছে না। অন্যদিকে অনেকেই সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় অক্সিজেন কিনে মজুত করছেন। এতে হাসপাতালগুলো পড়ছে অক্সিজেন সংকটে। এ অবস্থায় অপ্রয়োজনে অক্সিজেন মজুত না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে, অনেকেই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুত করছেন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য। যা ঠিক নয়। কারণ অক্সিজেন থেরাপি একটি কারিগরি বিষয়। দক্ষ চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কেউ অক্সিজেন রোগীকে প্রয়োগ করলে তা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার অনেক ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়। যা বাসায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই জনসাধারণের নিকট অনুরোধ, আপনারা অযথা বাসায় অক্সিজেন কিনে মজুত করবেন না। কারণ তা বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে এবং হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগী অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন, যা কাম্য নয়।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, ‘অক্সিজেন থেরাপিতে প্রত্যেক মিনিটে কত এমএল অক্সিজেন যাবে, এটা শুধুমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করে দেন। একজন টেকনোলজিস্টই পারেন কীভাবে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার মেজারমেন্ট হবে। কাজেই আমরা যেন নিজের বিপদ নিজে ডেকে না আনি। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় দক্ষ চিকিৎসক এবং টেকনোলজিস্ট ব্যতীত ব্যবহার না করি। বাসায় অক্সিজেন মজুত করা থেকে বিরত থাকি। হয়তো আপনার নিকট কোনো আত্মীয় মজুত রাখার জন্য হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে ভুগতে পারে। তার অন্য কোনো অসুবিধাও হয়ে যেতে পারে। কাজেই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মেডিকেল জিনিসপত্র বাসায় অযথা মজুত করবেন না।’

বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৫ জন মারা গেছেন। এতে করোনায় মোট মৃত্যু হলো ৯৭৫ জনের। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ১৭১ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ হাজার ৬৭৫ জনে।

বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করাটা অত্যন্ত জরুরি। বাস্তবতা হচ্ছে দাম বাড়ার পর বেশি টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেন সিলিন্ডার। দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করলেও বোতল আমদানি করতে হয়।

সুযোগ বুঝে রফতানিকারক দেশও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে মানুষজনের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। কাজেই যেকোনো মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।

এইচআর/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।