তরুণ নেতৃত্বে উজ্জীবিত হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ১৭ মার্চ ২০২১

ইমরান হুসাইন

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি,বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আজ। যিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যার জন্মের মাধ্যমেই বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীনতা। পেয়েছিল স্বাধীন দেশ,বাংলাদেশ। আজ থেকে শত বছর পূর্বে যদি বাংলার বুকে শেখ মুজিবের জন্ম না হতো তাহলে হয়তো পরাধীনতার অন্ধকারেই থেকে যেতে হতো আমাদের। শেখ মুজিবের এমন অবিশ্বাস্য নেতৃত্ব ক্ষমতা, এমন দূরদর্শিতা যার ঋণ এই বাংলার মানুষ কখনও শোধ করতে পারবে না।

ইতিহাস সত্যের কথা বলে।পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কয়েকজনকে পাওয়া বিরল যারা তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী আসন বেছে নিয়েছে জনসাধারণের মনে। যার দীপ্ততায় উজ্জীবিত হয়ে তরুণরা আজও তাদের স্বপ্নগুলোকে লালন করছে। এমন ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে যাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সে দেশের মানুষের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। তারা পরাধীন দেশবাসীর জীবনে মুক্তি এনে দেন, দুর্যোগের ঘনঘটা দূর করে তাদের হাতে স্বাধীনতার সূর্য পতাকা উপহার দেন। আমাদের দেশের এরূপ একজন সংগ্রামী পুরুষের কথা আমাদের চেতনায় মিশে আছে, মিশে আছে আমাদের রক্ত কণিকায়। তার অবদান মিশে আছে বাংলার মাটির প্রতিটা কণায় কণায়।

তরুণদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক । বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থহীন ভালোবাসা, সহজেই মানুষের সঙ্গে মেশা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণাবলি তার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। ৭ মার্চের ভাষণ, তার অঙুলি হেলানো বজ্রকণ্ঠ, শব্দ চয়ন ভীষণ শিহরিত করে তরুণদের। তাই তো তরুণ প্রজন্ম ধারণ করতে চায় বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন আপোসহীন ও সত্যের প্রতি অবিচল। বাল্যকাল থেকেই তিনি কোন অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। শিশুকাল থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিবাদী। মানবতাবাদী এ মহান নেতা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও আদর্শের সঙ্গে আপোস করেননি। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালিকাশক্তি। তিনি তরুণদের সংগ্রামের বাণী শিখাতেন, রাজনীতি ও সাহিত্যর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন, অন্যায়ের কাছে আপসহীন হতে শিখিয়েছেন, শিক্ষা ও শিক্ষার আদর্শগুলো জীবনে ধারণ করতে বলেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু তারুণ্যের প্রতি বিশ্বাস এবং তার নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে ‘তারুণ্যের চোখে বঙ্গবন্ধু কেমন’ সে বিষয়ে একটি জরিপ করা হয়। যাদের বয়স ১৫-৩০ এবং এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ৭৯ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং স্বদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ৮১ শতাংশ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সাম্যবাদী ভাবনা, উদার রাজনৈতিক দৃষ্টি, শোষণহীন সমাজ গড়ার চেতনা তরুণ সমাজকে প্রলুব্ধ করে। তার মানবিকতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতার কারণেই তিনি হতে পেরেছেন বাংলার তরুণদের স্বপ্ন সম্রাট।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিশেষ করে তরুণদের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল কোমল। কারণ তিনি জানতেন, কেবল তরুণরাই তাদের সৃষ্টিশীল মেধা ও অল্প পুঁজি খাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম। অথচ বর্তমানে আমরা তরুণ হয়ে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাই। মাঝে মাঝে ভুল পথে হেঁটে চলি, ভুলে যাই আমাদের অতীতকে। কিন্তু আমাদের বঙ্গবন্ধু প্রতিটা ক্ষেত্রে সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি অসীম সাহসিকতার সাথে পথ চলেছেন। দুর্গম পথে আত্মবিশ্বাস নিয়ে একাই পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান তরুণদের মাঝে একধরনের বিচলিত ভাব লক্ষ্য করা যায়। অল্পতেই হতাশ ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাই নিজেদেরকে উজ্জীবিত করতে বঙ্গবন্ধুকে জানা খুব প্রয়োজন। বিশেষ করে তরুণসমাজকে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও চেতনার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ২০১৪ সালে বিবিসির একটি জরিপে বঙ্গবন্ধু 'সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি' হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন। তাই তো অন্নদা শঙ্কার রায় বলেছেন, 'যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী বহমান, ততকাল রবে শেখ মুজিব তোমার অবদান।'

তরুণদের চিন্তা ও মননে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান তৈরির জন্য দরকার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে ঘরে ঘরে শেখ মুজিব। তরুণরাই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে লালন করে সোনার বাংলা গড়তে যেখানে মা হাসবে আর শিশুরা খেলবে। বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে অনন্তকাল লালিত হোক চিরঞ্জীব মুজিবের আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার নির্দেশনায় উজ্জীবিত হোক তরুণরা।

লেখক : শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।
[email protected]

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।