ইলন মাস্কের সাফল্যের ১০টি সূত্র

সাইফুল হোসেন
সাইফুল হোসেন সাইফুল হোসেন
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২৩ মে ২০২৪

বর্তমান বিশ্বে একজন অন্যতম বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তিবিদ হলেন ইলন মাস্ক। এমন বহুগুণসম্পন্ন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের জুড়ি মেলা সত্যি কঠিন। অনলাইন পেমেন্ট থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক গাড়ি ও মহাকাশ অভিযান সব ক্ষেত্রেই নিজের দূরদর্শিতা ও সুদক্ষ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে আজ তিনি হয়েছেন বিশ্বনন্দিত।

তার জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার পেটোরিয়াতে। খুব অল্প বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেন এবং একটি ম্যাগাজিন কোম্পানির কাছে তা প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন। ১৯৯৫ সালে ইলন মাস্ক তার ভাই কিম্বেল ও গ্রেগ কইরির সাথে মিলে জীবনের প্রথম কোম্পানির জিপ২ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল একটি সফটওয়্যার কোম্পানি, যা পরে ১৯৯৯ সালে কম্প্যাক্ট কোম্পানি কিনে নেয়।

এরপর ১৯৯৯ সালে ইলন মাস্ক একটি অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের সূচনা করেন, যা বর্তমানে পে-পল নামে পরিচিত। ইলন মাস্কের কর্মজীবনের অন্যতম অধ্যায় ছিল স্পেইস এক্স। ২০০২ সালে তিনি এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক কম খরচে এই মহাকাশের স্যাটেলাইট ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে সফল হয়েছে স্পেইস এক্স।

অন্যদিকে টেসলা মূলত একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কোম্পানি। ২০০৪ সাল থেকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে কোম্পানিটি সাফল্যের দিকে নিয়ে যান ইলন মাস্ক এবং ২০০৮ সালে তিনি সেই কোম্পানির সিইও পদে নিযুক্ত হন।

যদি কেউ ৫০ ঘণ্টা কাজ করে, আর আপনি যদি ১০০ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে আপনি অন্য কোম্পানির চেয়ে বছরে দ্বিগুণ কাজ করতে পারবেন। সুতরাং, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

ব্যবসা বিনিয়োগ তথা জীবনে সফলতা লাভের জন্য ইলন মাস্কের ১০টি উপদেশ সম্পর্কে জানাব আজকের আলোচনায়, যা আপনার আমার সবার জীবন বদলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

এক,
হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন না। ইলন মাস্ককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরপর তিনবার রকেট উড়িয়ে আপনি কি ব্যর্থ হলেন? আপনার কি মনে হয়নি এবার কাজটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘কখনোই না, কারণ আমি কখনো হাল ছেড়ে দেই না এবং কাজটি করার জন্য আমি আমার পুরোটাই দিয়েছি, হয় থাকবো না হয় পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবো’। তাই বলছি, কোনো কিছু করতে শুরু করে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না।

দুই,
ভালোবাসার কাজটি করুন। আপনি যে কাজটিই করুন না কেন আপনার সে কাজকে ভালোবাসতে হবে। এমনকি আপনি যদি সেরাদের সেরাও হন। এরপরও কিন্তু আপনার ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনার সেই কাজটি করা উচিত যেটি আপনি ভালোবাসেন। আর তা না হলে একসময় সবকিছু অর্থহীন মনে হবে আপনার কাছে। জীবনটা অনেক ছোট মনে হবে। যদি আপনি আপনার ভালোবাসার কাজটি করেন, তাহলে আপনি যখন কাজের মধ্যে থাকবেন না, এমনকি তখনও আপনি আপনার কাজটি নিয়ে ভাববেন। ভালোবাসা এমন এক ব্যাপার, যা আপনাকে চুম্বকের মতো টানবে। তাই কাজকেই ভালোবাসতে শিখুন।

তিন,
অন্যদের কথায় নিজেকে প্রভাবিত করবেন না। ইলন মাস্ক বলেন, আমি যখন আমার কোম্পানি শুরু করি তখন অসংখ্য মানুষ বলেছিল, আমি পাগলামি করছি। আমার খুব কাছের এক বন্ধু, আমাকে রকেট লঞ্চ করার পর কীভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তার একটা ভিডিও দেখিয়েছিল। সে চাচ্ছিল না যে, আমি আমার টাকা এভাবে নষ্ট করি। আমি এসবের পরও নিজের স্বপ্ন প্রভাবিত হতে দেইনি। দিন শেষে আমি ভাগ্যবান যে, মাত্র কয়েকটি ব্যর্থতার পরই আমরা সাফল্যের মুখ দেখেছি।

চার,
ঝুঁকি গ্রহণ করুন। ঝুড়ি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে আপনি অনায়াসেই সেই ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে পারবেন। আপনি যত বড় হতে থাকবেন ততই আপনার চারদিক থেকে বাধা আসতে থাকবে। যদি রিস্কটা ঠিকভাবে আপনার মতো করে কাজ না করে তখন বিষয়টা খুব জটিল হয়ে পড়বে। তাই এসব বাধায় পড়ার আগেই আপনার কাজগুলো করা শুরু করুন। আমি অবশ্যই আপনাকে রিস্ক নিতে উৎসাহিত করবো। কারণ বড় কিছু অর্জন করতে হলে রিস্ক নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

পাঁচ,
চেষ্টা করতে হবে। ইলন মাস্ক টেসলা কোম্পানির ব্যাপারে বলেছিলেন, এতটা সফলতা পাবে টেসলা আমি কখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম, হয়তো প্রজেক্টটা ব্যর্থ হবে। তবে আমি এটা ভেবেছিলাম, আমরা অন্তত মানুষের মধ্যে ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা দূর করবো। যেমন, ইলেকট্রিক গাড়ি দেখতে সুন্দর হয় না, ধীর গতিতে চলে, গলফ্কারের মতো বোরিং। ইলন মাস্ক আরও বলেছেন, আপনার কাজটি ব্যর্থ হতে পারে। এটা ভেবে, না করার চেয়ে কাজটি সফল করার জন্য একবার চেষ্টা করাটা আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ছয়,
কঠোর পরিশ্রম করুন। ইলন মাস্ক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি আর আমার ভাই মিলে আমাদের প্রথম কোম্পানি যখন শুরু করি, তখন কোনো অ্যাপার্টমেন্ট নেইনি। মাত্র একটা ছোট্ট রুম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। আমরা সোফায়ই ঘুমাতাম। আমাদের একটা কম্পিউটার ছিল, আমি সারারাত কোডিং করতাম, আর দিনের বেলা ওয়েবসাইটে কাজ করতাম, সপ্তাহের সাতদিনই। তাই আমি বলব, আপনি যদি কোনো কোম্পানি শুরু করেন, তাহলে প্রতিটি ঘণ্টার মূল্য দিতে হবে।

আমি আপনাকে একটি সহজ অঙ্কের মাধ্যমে জিনিসটি পরিষ্কার করি। যদি কেউ ৫০ ঘণ্টা কাজ করে, আর আপনি যদি ১০০ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে আপনি অন্য কোম্পানির চেয়ে বছরে দ্বিগুণ কাজ করতে পারবেন। সুতরাং, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

সাত,
প্রচারণার চেয়ে গুণগত মানের দিকে বেশি নজর দিন। টেসলার সিইও ইলন মাস্ক বলেন, আমরা আমাদের পণ্যের ক্ষেত্রে বাইরের দিকের চেয়ে ভেতরের দিকের গুরুত্ব অনেক বেশি দিয়েছি। অসংখ্য কোম্পানি এটি নিয়ে খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকে। তারা তাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো না করেই অন্য সব দিকে বেশি নজর দেয়। কিন্তু আমরা টেসলার বিজ্ঞাপনের জন্য কোনো খরচ করিনি। বরং, আমরা আমাদের কোয়ালিটি আরও ভালো করার জন্য সব কিছু খরচ করেছি। আর আমি মনে করি, এভাবেই করা উচিত।

আট,
যে কোনো কোম্পানির জন্য এটাই সত্যি। আপনার পদক্ষেপটি যদি প্রোডাক্টের কোয়ালিটি বাড়ায় তাহলে কাজটি করুন। নাহলে সেই কাজ বন্ধ করে দিন। আর সমস্যার সমাধান করতে পারে এমন লোক খুঁজে নিন। ইলন মাস্ক বলেন, আমি আমার কোম্পানিতে যখন কারও জব ইন্টারভিউ নেই তখন আমি তাদের প্রশ্ন করি, কাজ করতে গিয়ে তারা কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং কীভাবে সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তারা অবশ্যই তাদের চেষ্টা করা অনেকগুলো উপায়ের কথা বলবে। আর যদি কেউ বলতে না পারে তবে বোঝা যায় যে, সে আসলে সমস্যাটির কোনো সমাধান নিজে করেনি। কারণ যদি কেউ সত্যি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যায় তবে সে সেটিকে কখনো ভুলে যাবে না।।

নয়,
চমৎকার একটি টিম তৈরি করুন। আপনি যদি কোনো কোম্পানি নিয়ে কাজ শুরু করেন বা কোনো কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাহলে সবার আগে কিছু উদ্যমী মানুষকে সংগ্রহ করুন। তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করুন। কারণ, কাজের ক্ষেত্রে যদি আপনি একটি চমৎকার টিম তৈরি করতে পারেন. সেটা আপনার কাজকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। তারা কতটা মেধাবী,পরিশ্রমী এবং কাজে কতটা মনোযোগী এই গুণগুলো নির্ধারণ করে দেবে আপনার প্রতিষ্ঠানের সফলতা। তাই একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে পরিশ্রমী আর মেধাবী মানুষদের নিয়ে টিম তৈরি করুন।

দশ,
আপনার পণ্যটি যেন সবার চেয়ে সেরা হয়। সর্বদা মহান কিছু উৎপাদনের মাধ্যমেই একটা মহান কোম্পানি তৈরি হয়। যে পণ্যটি নিয়ে কাজ করছেন, যেন মানের দিক থেকে খুব ভালো হয়, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আপনি যে পণ্যটি নিয়ে কাজ করছেন সেটি যদি একেবারেই নতুন কিছু না হয় এবং পণ্যের যদি ভালো চাহিদা থাকে, তাহলে সে পণ্যের বড় বড় প্রতিযোগীও আছে। সুতরাং, আপনার পণ্যটি হতে হবে সবার চাইতে সেরা। কারণ ক্রেতারা জানতে চাইবে, বাজারে নামিদামি ব্র্যান্ড থাকতে আমি কেন আপনার টা নেব? যদি অন্য পণ্যের সাথে নিজের পণ্যের পার্থক্য দেখানো যায়, তাহলেই তার আগ্রহ বাড়বে।

আপনি যদি আপনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য অর্জন করতে চান তাহলে ইলন মাস্কের ১০টি পরামর্শ অনুসরণ করুন। আপনার স্বপ্ন সত্যি হোক।

লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।