ভূমিকম্প ও আমাদের প্রস্তুতি

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

ইরাক-ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। রোববার রাতে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরো ৭ হাজারের বেশি মানুষ। শক্তিশালী এই ভূমিকম্প ইরাকের উত্তরাঞ্চলের আধা স্বায়ত্তশাসিত এলাকা সুলাইমানিয়ার হালাবজাহ শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হানে। ইসরায়েল, কুয়েত এবং কাতারেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে ইরান সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় সারপোল-ই-জাহাব শহর এবং কারমানসাহ প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে গত বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশে সকালে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের সূত্র মতে, বুধবার আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে ভারতের ত্রিপুরায় ৪ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পনের কারণে বাংলাদেশে কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে ভূমিকম্পের আঘাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে। বাংলাদেশ ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের এই কথা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। ভূমিকম্প বলে-কয়ে আসেনা। কিন্তু এজন্য করণীয় রয়েছে। এ জন্য আমরা কতোটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যার পূর্বাভাস এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারছে না। তবে নানা গবেষণায় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে বার বার। বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ এখন কোনোমতেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ গত ৮০-৮১ বছরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্লেট যাচ্ছে উত্তর দিকে, আর উত্তর দিকে আমাদের ইউরেশিয়ান প্লেট। দুটি প্লেট ধাক্কা দিচ্ছে, আর তাতে করে এর বাউন্ডারিতে এনার্জি স্টোর হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পরপর প্রেসারটি রিলিজ করার জন্য জায়গাটি নড়ে যায়, আর তখন ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা যেন ভূমিকম্প নামক মহা বিপদকে ডেকে আনছি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক। একই সাথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূকম্পনেও বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বার বার ভূমিকম্প এ কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আসলে কতোটা প্রস্তুত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। অল্প জায়গায় এতো বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয় বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। এতে স্বল্পমাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে অনেক ভবন। এছাড়া ভূমিকম্পপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রকৃতির ওপর অবিচার করে নিজেরাই যেন ভূমিকম্প ডেকে না আনি সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। ইরাক ও ইরানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি রইলো আমাদের গভীর সমবেদনা।

এইচআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।