নদী গর্জে ওঠে প্রতিদিন, কর্তারা ব্যস্ত ফাইল ও ফোনে
কুড়িগ্রামের চিলমারীর চরপাড়ায় প্রতিদিন নতুন করে ভাঙে হৃদয়, তলিয়ে যায় বসতঘর, হারিয়ে যায় প্রজন্মের স্মৃতি। ব্রহ্মপুত্রের ক্রমাগত গর্জনে কেঁপে ওঠে চরাঞ্চল, কিন্তু সেই শব্দ যেন পৌঁছায় না প্রশাসনিক ভবনের ঘন দেয়ালে। ভাঙনের তাণ্ডবে যখন ঘরহারা মানুষের কান্না ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকেন রিপোর্ট পাঠানো, ফোন ধরার ভান কিংবা ফাইল ঘাটায়। দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আজও মেলেনি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা, নেই উদ্ধার, নেই প্রতিরোধ। নদী তার খেয়াল খুশিমতো গিলে নিচ্ছে জনপদ, আর কর্তারা যেন দেখেও না দেখার অভিনয়ে পারদর্শী হয়ে উঠছেন। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: রোকনুজ্জামান মানু
-
নদীর স্রোতের বিপরীতে টিকে থাকা এসব মানুষ যেন প্রতিনিয়ত লড়ছেন বেঁচে থাকার অসম যুদ্ধে। দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহত নদীভাঙনে চিলমারীর একাধিক গ্রাম এখন বিলীনের পথে।
-
উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা ও চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতি এলাকা-এই দুই স্থান যেন ব্রহ্মপুত্রের রোষানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দুই সপ্তাহেই বিলীন হয়েছে দেড় শতাধিক বসতভিটা। হারিয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
-
চিলমারী সদর ইউনিয়নের চর শাখাহাতিতে একই দৃশ্য। ৩৫ বছর ধরে গড়ে ওঠা এই জনপদ যেন ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
-
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নিজের বাড়িও ছিল নদীর পাড়ে। কয়েকদিন আগেই সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। এই চর থেকে মানুষ এখন অন্য চরে গিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে। কিন্তু ভাঙনের যে গতিবেগ, তাতে আর কোনো জায়গা নিরাপদ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিবার শুধু একটাই কথা শোনা যায় -দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
-
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, ‘শনিবার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। রোববার আমি জেলায় ছিলাম, সেখানে গিয়ে বিষয়টি আবারও তাদের বলেছি।’
-
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘চর শাখাহাতিতে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।’ তবে কবে নাগাদ তা হবে, সে বিষয়ে কোনো সময়সূচি দেননি তিনি।
-
আর নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এলাকায় ভাঙনের বিষয়ে তিনি অবগতই নন। বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেবো।’
-
প্রশ্ন ওঠে যেখানে শত শত পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার প্রহর গুনছে, সেখানে দায়িত্বশীল দপ্তর কীভাবে এমন উদাসীন থাকতে পারে?