ঢাকা থেকে কলকাতা, মিথিলার গল্পটা সিনেমার চেয়েও রঙিন
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী মিথিলার জন্মদিন আজ। ১৯৮৪ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম তার। অভিনেত্রীর পুরো নাম রাফিয়াত রশিদ মিথিলা হলেও তাকে সবাই চিনে শুধু ‘মিথিলা’ নামে। একটি ছোট্ট নাম, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে বহুমাত্রিক এক জীবনের রঙিন অধ্যায়। কখনো তিনি গানের স্টেজে, কখনো নাটকের ক্যামেরার সামনে, আবার কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার হলে। শুধু একপাশে থেকে তিনি চলেননি, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের উপস্থিতিকে পরিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত তার পথচলা, প্রেম, কাজ আর পারিবারিক গল্প; সব মিলিয়ে মিথিলার জীবন যেন বাস্তবের সেই সিনেমা, যেখানে প্রতিটি দৃশ্যেই আছে মোড় ঘোরানো চমক। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
মিথিলার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের মিডিয়াতে। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তিনি দ্রুত নজর কাড়েন তার অভিনয়গুণে।
-
‘হাউজফুল, ‘একান্নবর্তী’, ‘ঘরে বাইরে’সহ অসংখ্য টিভি নাটকে তার সাবলীল অভিনয় তাকে এনে দেয় আলাদা পরিচিতি। তাকে দেখলেই মনে হয় প্রচেষ্টা আর মেধা মিলে একটা জীবন কতোটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়।
-
শুধু অভিনয়ই নয়, মিথিলার আরেকটি শক্ত পরিচয় তিনি একজন শিক্ষাবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান উচ্চতর ডিগ্রির জন্য। এরপর সুইজারল্যান্ড থেকে অর্জন করেন ‘এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিষয়ে মাস্টার্স।
-
নারী ও শিশু শিক্ষা, ইকুইটি, এবং আর্ট-ভিত্তিক পদ্ধতিতে শিক্ষা উন্নয়ন মিথিলার বিশেষ আগ্রহের জায়গা।
-
শুধু কাজ নয়, ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আলোচিত এই গুণী নারী। ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, আবার নতুন করে জীবন শুরু, সবকিছু তিনি পেরিয়েছেন সাহসের সঙ্গে।
-
সংগীতশিল্পী তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরও একক মাতৃত্বকে ভরসা করে মেয়েকে বড় করেছেন।
-
পরবর্তীতে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে পেয়েছেন ভারতের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিকে। বিয়ের পর তার জীবনের আরেকটি অধ্যায় খুলে গেছে কলকাতায়।
-
সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করার পর থেকেই মিথিলার পা পড়েছে কলকাতার মিডিয়াতেও। সেখানে ‘মায়া’, ‘অবন্তীর আকাশ’, ‘এক্স ইকুয়েশন’–এর মতো কাজ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন মুন্সীয়ানা।
-
দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় মিথিলা হয়ে উঠেছেন একটি সেতুবন্ধন, যিনি অভিনয় দিয়ে সংস্কৃতিকে এক করেছেন।
-
মিথিলা অসাধারণভাবে নিজের সব পরিচয়কে সমন্বয় করেন। তিনি মা, স্ত্রী, অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন এনজিও পেশাজীবী; এসব পরিচয়ের ভিড়ে কোথাও কোনো গড়বড় নেই। নিজের মেয়ের সঙ্গে সময় দেওয়া, পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং অভিনয়ের ব্যস্ততা; সবই চলে পরিপাটিভাবে।
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথিলা যে ছবি বা ক্যাপশন দেন, সেখানেও ধরা পড়ে তার চিন্তার আধুনিকতা ও ব্যক্তিত্বের স্বাতন্ত্র্য। কখনো শাড়িতে নরম সৌন্দর্য, কখনো ওয়েস্টার্ন লুকে সাহসী উপস্থিতিতে মুগ্ধ হতে বাধ্য তার ভক্ত-অনুরাগীরা।
-
নতুন আরেকটি বছর শুরু হবে মিথিলার জীবনে। হয়তো আবার নতুন কোনো চরিত্রে, নতুন কোনো চ্যালেঞ্জে, নতুন কোনো অধ্যায়ে দেখা যাবে তাকে। কিন্তু যেখানেই থাকুন, নিজের মত করে বাঁচার এই অনন্য সাহস আর পরিপক্বতা তাকে করে তোলে অনন্য।
-
মিথিলার গল্পটা নিছক এক তারকার গল্প নয়। এটা এক নারীর গল্প, যিনি সময়ের বাঁকে বাঁকে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন।