সময়কে ছুঁয়ে থাকা মুখাবয়ব আবুল হায়াত
বাংলা অভিনয়জগতে কিছু মুখ এমন রয়েছে, যাদের দেখা মানেই একধরনের আত্মিক প্রশান্তি-তাদের একজন আবুল হায়াত। নাটক, সিনেমা কিংবা মঞ্চ সব মাধ্যমেই নিজের বলিষ্ঠ উপস্থিতি ও মেধা দিয়ে তিনি ছুঁয়ে গেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। কখনও একজন আদর্শ পিতা, কখনও কঠোর শিক্ষক, কখনও নিঃশব্দ দার্শনিক প্রতিটি চরিত্রে তিনি মিশে গেছেন এমনভাবে যে, অভিনয়কে করে তুলেছেন বাস্তবেরই এক প্রতিচ্ছবি। জীবনের নানা পর্যায়ে তার যেসব ছবি ও চরিত্র দর্শকদের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৪৪ সালের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তার জন্ম। তবে দেশভাগের পর তার পরিবার চলে আসে বাংলাদেশে। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক থাকলেও প্রকৌশল পড়েছেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান চুয়েট)। কিন্তু মঞ্চই যেন তার প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিল।
-
আবুল হায়াতের অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৬৯ সালে মঞ্চনাটকের মাধ্যমে। এরপর ১৯৭০ সালের দিকে তিনি যুক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটকে। ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক, পরিমিত ও বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় তাকে করে তোলে জনপ্রিয়।
-
তিনি কখনও হয়েছেন একজন আদর্শ পিতা, কখনও কঠোর শিক্ষক, আবার কখনও নিঃশব্দ এক দার্শনিক। আবুল হায়াত অভিনয় করেছেন এমন সব চরিত্রে, যেগুলো বাস্তব জীবনের খুব কাছাকাছি। হয়তো এ কারণেই তিনি দর্শকের মনে এত গভীর ছাপ ফেলেছেন।
-
তার অভিনয় কখনও আলাদা করে নজর কাড়ে না। কারণ সেটি এতটাই জীবন্ত যে আলাদা করে বোঝাই যায় না, যে তিনি অভিনয় করছেন।
-
শুধু নাটক নয়, বড় পর্দাতেও রেখেছেন নিজের দক্ষতার ছাপ। তিনি কাজ করেছেন বহু চলচ্চিত্রে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আগুনের পরশমণি’, ‘ব্যাচেলর’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘আয়নাবাজি’ ইত্যাদি। প্রতিটি ছবিতে তিনি ছিলেন চরিত্রের আত্মা।
-
আবুল হায়াত শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি একজন সফল নাট্যনির্মাতা ও সাহিত্যিকও। বহু নাটক নির্মাণ করেছেন, আবার লিখেছেন উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থও। তার লেখা ‘আমার কথা’ আত্মজীবনীটি পাঠকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একাধারে বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম প্রজন্মের নাট্যব্যক্তিত্ব, আবার নাট্যচর্চার এক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।
-
আবুল হায়াত পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০১৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। পেয়েছেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ আরও নানা স্বীকৃতি। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার দর্শকের ভালোবাসা।