রুপালি পর্দার মিষ্টি মেয়েটি আজ ৭৫ এর স্মৃতিতে
আজ ১৯ জুলাই। বেঁচে থাকলে বরেণ্য অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী পা রাখতেন জীবনের ৭৫ বছরে। উৎসব হতো নানা প্রান্তে। সিনেমা হলজুড়ে বাজত তার অভিনীত ছবির গান। ছোট-বড় পর্দা ভরে যেত তার সাক্ষাৎকার, স্মৃতিচারণায়। কবরী আজ আর আমাদের মাঝে নেই, তবে তার জন্মদিন থেমে থাকেনি। বরং সিনেমা দিয়েই স্মরণ করা হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্রের এই ‘মিষ্টি মেয়ে’কে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৫০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এক হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন মিনা পাল। চলচ্চিত্রে এসে নাম বদলে হয়ে যান ‘কবরী’। বাবার নাম শ্রীকৃষ্ণদাস পাল, মা লাবণ্যপ্রভা পাল।
-
ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শিল্প-সাহিত্যপ্রেমী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন।
-
এক বছর পরেই, মাত্র ১৪ বছর বয়সে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে ছবির নাম ‘সুতরাং’। ১৯৬৪ সালের সেই ছবি দিয়েই শুরু হয় বাংলা চলচ্চিত্রে এক কিংবদন্তির যাত্রা।
-
তার অভিনয়জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মোড় আসে ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুজন সখী’ ছবির মাধ্যমে। ফারুকের বিপরীতে তার সেই অনবদ্য অভিনয় তাকে পৌঁছে দেয় দর্শকের হৃদয়ের কেন্দ্রে। বাংলা চলচ্চিত্রে কবরী তখন শুধুই একটি নাম নয়, বরং আবেগ, ভালোবাসা ও নিখাদ শিল্পের প্রতীক।
-
কবরী অভিনয় করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুতরাং’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘সারেং বউ’, ‘ময়নামতি’, ‘দেবদাস’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘বিনিময়’, ‘বধূ বিদায়’, ‘রংবাজ’, ‘পারুলের সংসার’, ‘বাহানা’ প্রভৃতি।
-
কবরী ছিলেন এমন একজন অভিনেত্রী, যার বিপরীতে অভিষেক হয় পাঁচজন জনপ্রিয় নায়কের ফারুক, জাফর ইকবাল, আলমগীর, উজ্জ্বল ও সোহেল রানা।
-
অভিনয়ের বাইরেও কবরী ছিলেন এক সংগ্রামী নারী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থান করে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে হয়েছিলেন সংসদ সদস্য।
-
নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রও। ‘আয়না’ ছিল তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা। জীবনের শেষ সময়ে নির্মাণ করছিলেন ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামের একটি ছবি, যেটি অসমাপ্তই থেকে গেছে।
-
২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান কবরী। তার প্রয়াণ যেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অধ্যায়ের ইতি। কিন্তু মৃত্যু কখনো সত্যিকারের শিল্পীকে মুছে দিতে পারে না। কবরী আজও বেঁচে আছেন তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মাঝে, সংলাপে, গানে, চোখের অভিব্যক্তিতে।
-
তার আত্মজীবনী ‘স্মৃতিটুকু থাক’ শুধু একটি বই নয়, বরং এটি একটি সময়, একটি অধ্যায়, একটি সংগ্রামের দলিল।