মুগ্ধতার আরেক নাম তারিন, আজ তার জন্মদিন
ছোট পর্দার এক অনন্য আবেশের নাম তারিন। অভিনয়ের পরতে পরতে যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অনুভূতির নিখুঁত বুনন, দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন আপন আলোয়। নাচ, গান, অভিনয় আর উপস্থাপনায় তিনি হয়ে উঠেছেন একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। শৈশবেই যার প্রতিভার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল জাতীয় পরিসরে, সেই তারিন আজ বাংলা বিনোদনজগতে এক মুগ্ধতার প্রতীক। আজ এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন। দিনটি তাই তার ভক্ত-অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তারিন জাহানের অভিনয়জীবনের গল্প, সাফল্যের ঝলক আর শিল্পীসত্তার পূর্ণতা। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
শৈশবেই তার প্রতিভার দীপ্ত ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ৯ বছর বয়সে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় অভিনয়, নাচ ও গল্প বলায় প্রথম স্থান অর্জন করে সবাইকে চমকে দেন। তখনই যেন তিনি জানান দিয়েছিলেন এগিয়ে যাবেন দূর, জয় করবেন অগণিত ভালোবাসা।
-
তারিনের শিল্পচর্চা শুরু আরও আগে মাত্র সাড়ে ৩ বছর বয়সে। নৃত্যশিক্ষা দিয়ে শুরু, পরে শাস্ত্রীয় সংগীতেও দীক্ষা নেন। ১৯৮৪ সালে জীবনের প্রথম মঞ্চে ওঠেন নৃত্য পরিবেশনায়। সেই আয়োজনেই তার পারফরম্যান্স মুগ্ধ করে দেয় স্থানীয় দর্শকদের, তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পরিচিতির বৃত্তে।
-
পরের বছরই জাতীয় প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’ তে সাফল্য এনে দেয় টেলিভিশনে প্রবেশের সোনালি সুযোগ। শিশুশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ‘এইসব দিন রাত্রি’ এবং ‘সংশপ্তক’ এর মতো মাইলফলক নাটকে অভিনয় করে নজর কাড়েন নির্মাতা ও দর্শকের।
-
তারিনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সূচনা ঘটে ‘কাঁঠাল বুড়ি’ নাটকের মাধ্যমে। যেখানে তার সহশিল্পী ছিলেন তৌকীর আহমেদ। উল্লেখযোগ্য যে, এটিই ছিল এটিএন বাংলার প্রচারিত প্রথম নাটক। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
-
একটির পর একটি দর্শকনন্দিত নাটকে নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখে যান তিনি। ‘ফুলের বাগানে সাপ’, ‘কথা ছিল অন্যরকম’, ‘ইউ টার্ন’, ‘মায়া’, ‘হারানো আকাশ’, ‘নূপুর’, ‘বছর কুড়ি পরে’, ‘রাজকন্যা’, ‘সবুজ ভেলভেট’, ‘কালান্তর’, ‘নাকফুল’, ‘কাগজের বাড়ি’, ‘বন চালতার গায়ে’, ‘স্বপ্নগুলো জোনাক পোকার মতো’, ‘সন্ধিক্ষণ’, ‘জ্যোৎস্না ও তার জল’, ‘রঙ তুলির আঁচড়’, ‘অবন্তী তোমার অপেক্ষায়’, ‘গ্র্যান্ড মাস্টার’, ‘কালো মখমল’, ‘অপরাহ্ন’, ‘ডেলিসিয়া হোটেল’সহ অসংখ্য নাটকে তার মেধা আর আবেগপূর্ণ অভিনয় ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য দর্শকের হৃদয়।
-
তারিন চলচ্চিত্রে খুব বেশি কাজ না করলেও ‘পিরীত রতন পিরীত ধন’ এবং ‘কাজলের দিনরাত্রি’ সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। ছোট পর্দায় অসামান্য সফলতার পরও তিনি কখনো নিজেকে এক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখেননি।
-
শুধু অভিনয় নয়, তার কণ্ঠেও রয়েছে সুরের মাধুর্য। ২০১১ সালে ‘আকাশ দেব কাকে’ শিরোনামে নিজের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন।
-
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের সিনেমাতেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।
-
গানের পাশাপাশি উপস্থাপনায়ও রয়েছে তার দক্ষতা। ‘সুর আর আনন্দ’ এবং ‘গানে আলাপনে’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় দর্শকদের মন জয় করেছেন অনায়াসে।
-
তিন দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় জীবনে তারিন পেয়েছেন মানুষের অগাধ ভালোবাসা, সম্মান এবং স্বীকৃতি। অভিনয়ে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে দুইবার সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
-
জন্মদিনে তারিনকে জানাই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। অভিনয়ের আলোয় তিনি যেমন উজ্জ্বল থেকেছেন, আগামী দিনগুলোতেও তার শিল্পের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ুক নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণায়।