জন্মদিনে ফিরে দেখা: সিনেমার পর্দায় অরুণা বিশ্বাসের রঙিন যাত্রা
রূপালি পর্দায় তার প্রথম উপস্থিতি যেন এক অনুচ্চারিত প্রতিজ্ঞা নিজেকে প্রমাণ করার, নিজের স্বাতন্ত্র্য গড়ে তোলার। আর আজ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের চোখে অরুণা বিশ্বাস শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি এক প্রজন্মের আবেগ, সময়ের সাক্ষী। ১৯৬৭ সালের এই দিনে ঢাকা (বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলা) এর এক সাংস্কৃতিক পরিবারে তার জন্ম। অরুণা বিশ্বাসের রক্তেই ছিল অভিনয়ের ধারা। মা তুলিকা বিশ্বাস নিজেও ছিলেন মঞ্চ ও টিভির পরিচিত মুখ। সেই পারিবারিক উত্তরাধিকারই তাকে টেনে এনেছিল অভিনয়ের ভুবনে। তবে শুধুই উত্তরাধিকার নয়, তার নিজস্ব প্রতিভা ও নিরন্তর পরিশ্রমই তাকে দিয়েছে দীর্ঘ পথচলার প্রেরণা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে। তখন বাংলা সিনেমায় ঢেউ তুলছিল একাধিক বাণিজ্যিক এবং আর্টফিল্ম। নতুনদের জন্য জায়গা করে নেওয়া সহজ ছিল না, তবুও অরুণা বিশ্বাস তার সৌন্দর্য, বাচনভঙ্গি এবং অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে দ্রুত নজর কাড়েন। ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ কিংবা ‘পাগল মন’, এই ছবিগুলোতে তার সংবেদনশীল অভিনয় তাকে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে দেয়।
-
সময় গড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে বদলেছে চরিত্র, চাহিদা, রুচি। কিন্তু অরুণা বিশ্বাসের অভিনয়ের ধারাবাহিকতা ও গভীরতা রয়ে গেছে অটুট। এক সময় যিনি ছিলেন রোমান্টিক গল্পের নায়িকা, তিনিই পরে হয়েছেন মায়ের চরিত্রে দর্শকের ভালোবাসার পাত্র। তার অভিনয়ের মুন্সীয়ানা ছিল এমনই; যে চরিত্রই পান, সেটিকেই প্রাণবন্ত করে তুলতেন।
-
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনায়ও নাম লিখিয়েছেন তিনি। নাটক, টেলিছবি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে তার সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, নারীকেন্দ্রিক ভাবনা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি সমাজ, নারীর আত্মপরিচয় ও সংগ্রাম এই বিষয়গুলো তার কাজের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বারবার।
-
অরুণা বিশ্বাসের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শক্তি তার গ্রহণযোগ্যতা। নব্বই দশকের দর্শক যেমন তাকে দেখেছেন সজীব ও প্রাণবন্ত একজন নায়িকা হিসেবে, তেমনি আজকের প্রজন্ম তাকে দেখছে গাম্ভীর্যপূর্ণ মা, শাশুড়ি কিংবা শিক্ষিকার ভূমিকায়। তিনি প্রমাণ করেছেন নায়িকা মানে শুধু বয়সভিত্তিক সৌন্দর্য নয়, বরং চরিত্রের গভীরতা ও প্রভাবও একান্ত জরুরি।
-
তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি ও সম্মাননা। যদিও অরুণা বিশ্বাস কখনোই পুরস্কারের পেছনে ছোটেননি, কিন্তু তার কাজই তাকে এনে দিয়েছে দর্শকপ্রেম এবং সমালোচকদের শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রবাসেও তিনি পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা।
-
অভিনয়ের বাইরে একজন মা হিসেবেও তিনি অনন্য। তার একমাত্র সন্তান রাহুল আনন্দ নিজেও সংস্কৃতিমনা। একক মাতৃত্বের পথ সহজ ছিল না, কিন্তু তিনি তা করেছেন সাহসিকতার সঙ্গে।