নায়িকা যখন লেখিকা, মঞ্চ ছাপিয়ে সাহিত্যে ভাবনা
আধুনিক পর্দায় কিছু মুখ আছে যাদের উপস্থিতি আলাদা, যাদের অভিনয়ে থাকে এক ধরনের শৈল্পিক স্বাচ্ছন্দ্য। আশনা হাবিব ভাবনা তেমনই একজন, যিনি একাধারে অভিনেত্রী, মডেল ও লেখিকা। পর্দার আলোর নিচে যেমন সাবলীল তিনি, তেমনি সাহিত্যের পাতাতেও রাখেন সমান পদচিহ্ন। আজ ভাবনার জন্মদিন। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে ফিরে দেখা যাক তার শিল্পযাত্রার বহুমাত্রিক অধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৯৪ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম নেওয়া ভাবনা ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে বড় হয়েছেন। বাবা হাবিবুল ইসলাম একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর মা রেহানা হাবিব গৃহিণী হলেও পরিবারজুড়ে ছিলো শিল্পের ছোঁয়া। মাত্র দুই বছর বয়সেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো সেই ছোট্ট মেয়ে আজ পরিণত হয়েছেন একজন আত্মবিশ্বাসী অভিনেত্রীতে।
-
২০০৮ সালে মূল অভিনেত্রী হিসেবে টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম নাটক ‘নট আউট’-এই নজর কাড়েন। এরপর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মিত ‘ফার্স্ট ডেট’ নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা বাড়ান বহু গুণ। অভিনয়ে ছিল সূক্ষ্মতা, অভিব্যক্তিতে ছিলো মাধুর্য-যা দ্রুতই তাকে দর্শকপ্রিয় করে তোলে।
-
ভাবনার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক ও ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘চৌধুরী ভিলা’, ‘অচেনা প্রতিবিম্ব’, ‘শূন্য সমীকরণ’, ‘চেনা মুখ অচেনা মুখ’, ‘জয় পরাজয়’, ‘সোনার সুতা’ ইত্যাদি। চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারা, সংলাপে প্রাঞ্জলতা এবং চোখে ভাষা-এসব গুণ তাকে ধীরে ধীরে শিল্পের এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
-
শুধু পর্দা নয়, ভাবনা কথা বলেন কলমের ভাষাতেও। তার লেখা উপন্যাস ‘গুলনেহার’, ‘তারা’ ও ‘গোলাপী জমিন’ একুশে বইমেলায় পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাহসী ভাষা, সমাজসচেতন ভাবনা এবং নারীর নিজস্ব কণ্ঠস্বর ফুটে উঠেছে তার গল্পগুলিতে।
-
২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত তার কবিতার বই ‘রাস্তার ধারের গাছটির কোনো ধর্ম ছিল না’-শিরোনামেই বোঝা যায়, কতটা গভীর জীবনচেতনা ও ভাবনার বহর নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। বইটিতে ৫০টি কবিতা স্থান পেয়েছে, যেগুলোতে শহর, সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, স্বাধীনতা আর অস্তিত্বের খোঁজ উঠে এসেছে নান্দনিক ভঙ্গিতে।
-
অনেকে শুধু অভিনয়ে নিজেকে খুঁজে পান, কেউ বা সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। ভাবনা সেই বিরল উদাহরণ, যিনি দুই মাধ্যমেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বকীয় ভঙ্গিতে। তার শিল্পচর্চা যেন এক জীবন থেকে আরেক জীবনে যাত্রার গল্প যেখানে মঞ্চ, পর্দা আর কাগজ একে অন্যের পরিপূরক।