অভিনয়ে নীরব বিপ্লবের নাম ঈশিতা
বাংলাদেশের অভিনয়জগৎ অনেক আলো, অনেক কোলাহলের মাঝেও কিছু শিল্পী আছেন যারা আলোতে নিজেকে রাখেন না, বরং নিজেকে উজাড় করে আলো ছড়ান অন্যদের জন্য। রুমানা রশিদ ঈশিতা তাদেরই একজন। তিনি যেন শিল্পের পরিধিতে এক নীরব বিপ্লব, যিনি অভিনয়কে দেখেছেন সাধনার মতো আর সৃজনশীলতাকে বেছে নিয়েছেন জীবনের যাপন হিসেবে। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
টিভির পর্দায় প্রথম যখন ঈশিতা হাজির হন, তখন তিনি এক কিশোরী। সময়টা আশির দশক। শিশুশিল্পী হিসেবে তার অভিনয় ছিল সাবলীল, স্বাভাবিক ও প্রাঞ্জল। বড় পর্দায় বা নাটকে যে অভিনয় দেখাতে হয় তা তিনি কখনো চিৎকার করে বোঝাননি-সবসময় মৃদু, সংবেদনশীল আর বাস্তবতানির্ভর পারফরম্যান্স দিয়েই দর্শকের মন ছুঁয়েছেন।
-
তারুণ্যে পা রেখে ঈশিতা হয়ে ওঠেন বাংলার ঘরোয়া মেয়েদের প্রতিচ্ছবি। টিভি নাটকে এক সময় তার উপস্থিতি হয়ে ওঠে শান্তির প্রতীক। একরঙা বা একমাত্রিক চরিত্র নয়, বরং জটিল আবেগ ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভরা নারীর ভূমিকাতেও ঈশিতা ছিলেন দক্ষ ও অভিনব।
-
অভিনয় দিয়ে মন জয় করলেও ঈশিতার সৃজনশীলতা থেমে থাকেনি ক্যামেরার সামনে। নাট্যনির্মাণ, চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনার কাজেও তিনি রেখেছেন তার নিজস্ব স্বাক্ষর। পেশাদার নির্মাতা হিসেবে তিনি কখনোই বাজারের ট্রেন্ডকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেননি। গল্প, আবেগ, বাস্তবতা-এই তিনের মিশেলে নির্মিত তার নাটকগুলো আজও প্রশংসিত।
-
অনেকেই জানেন না, ঈশিতা একজন প্রশিক্ষিত গায়িকাও। তিনি ক্লাসিকাল সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন তার প্রথম একক অ্যালবাম, যেখানে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গানের সংমিশ্রণ ছিল। গানের প্রতি তার নিষ্ঠা প্রমাণ করে, ঈশিতা শিল্পের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
-
সমসাময়িক অনেক তারকা যখন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের প্রচার করে থাকেন, ঈশিতা তখন থেকেছেন একটু আড়ালে। তার প্রতিভার প্রচার তিনি নিজেই করেননি, বরং তার কাজই কথা বলেছে। তার অভিনীত নাটক, পরিচালিত কাহিনি, এমনকি তার উপস্থিতি-সবই এক ধরনের ‘কালচারাল রিফাইনমেন্ট’।
-
একজন মা, একজন শিক্ষক, একজন নির্মাতা-এসব পরিচয়ের পাশাপাশি ঈশিতা একজন মানবিক মানুষ। তিনি কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনের মধ্যে দারুণ ভারসাম্য রেখে চলেছেন। মিডিয়ার ঝলকানির বাইরে থেকেও প্রমাণ করেছেন, সত্যিকারের শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য শিরোনাম হওয়া জরুরি নয়।