সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিনে শ্রদ্ধা
বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যাদের উপস্থিতি একাধারে ইতিহাস, গৌরব আর আবেগের প্রতীক। সাবিনা ইয়াসমিন তাদেরই একজন। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তার কণ্ঠ যেন এক অলঙ্ঘনীয় অধ্যায়, যাকে বাদ দিয়ে আমাদের সংগীত-ঐতিহ্যের পূর্ণাঙ্গ ছবি আঁকা যায় না। আজ এই কিংবদন্তি শিল্পীর জন্মদিন-যা কেবল একজন ব্যক্তির জন্মতিথি নয়, বরং আমাদের সুরের ভাণ্ডারের প্রতি এক অমূল্য সংযোজনের দিনও বটে। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৫৪ সালের এই দিনে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। পরিবারের পরিবেশ, বিশেষ করে সংগীতপ্রেমী আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্য তাকে ধীরে ধীরে গানের ভুবনে টেনে আনে। শিশুকণ্ঠে প্রথম যে গানটি রেডিওতে প্রচারিত হয়েছিল, তা-ই শ্রোতাদের মন কাড়ে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার দীর্ঘ ও গৌরবময় যাত্রা।
-
বাংলা চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গানের ইতিহাসে সাবিনা ইয়াসমিন একটি যুগান্তকারী নাম। ষাটের দশকের শেষ দিকে যখন তিনি সিনেমায় গান গাওয়া শুরু করেন, তখনকার জনপ্রিয়তা এবং শিল্পীদের ভিড়ে নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করা সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু তাঁর মিষ্টি কণ্ঠ, নিখুঁত উচ্চারণ ও আবেগময় প্রকাশভঙ্গি তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
-
‘আমার স্বপ্নগুলো’, ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’-এমন অসংখ্য গান আজও মানুষের হৃদয়ে ধ্বনিত হয়। তার কণ্ঠস্বরের স্বচ্ছতা আর আবেগ সিনেমার গল্পকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
-
সাবিনা ইয়াসমিন শুধু চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতার পর দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি এক বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেন। তার কণ্ঠে উচ্চারিত দেশপ্রেমিক গানগুলো আজও মানুষের আবেগ জাগায়, শক্তি জোগায়।
-
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাবিনা ইয়াসমিন অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারই পেয়েছেন এক ডজনের বেশি। এছাড়া একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও তার ঝুলিতে রয়েছে।
-
জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে তিনি আজও আছেন অবিচল। ব্যক্তিগত জীবনের নানা চড়াই-উতরাই, অসুস্থতা কিংবা সামাজিক চাপ-কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং প্রতিটি সংগ্রামই যেন তার শিল্পীসত্ত্বাকে আরও দৃঢ় করেছে।
-
সাবিনা ইয়াসমিন কেবল একজন শিল্পী নন, তিনি এক উত্তরাধিকার। তার গান শুনে বড় হয়েছেন অসংখ্য তরুণ-তরুণী, যারা সংগীতকে ভালোবেসে নিজেদের জীবন গড়তে চেয়েছেন। তার কণ্ঠ আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে।
-
আজ তার জন্মদিনে আমরা শুধু একজন সংগীতশিল্পীকে নয়, একটি যুগকে স্মরণ করি। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া প্রতিটি গান আমাদের কাছে এক একটি স্মৃতি, এক একটি ইতিহাস। সময় পেরিয়ে গেলেও তার কণ্ঠস্বর অমলিন থাকবে, সুরের শঙ্খধ্বনি হয়ে বাজতে থাকবে প্রতিটি প্রজন্মের হৃদয়ে।