নৃত্যের তাল থেকে জীবনের মঞ্চে মোনালিসা
কিছু মুখ সময়ের সঙ্গে বদলায় না, বরং সময়ই যেন থেমে যায় তাদের সামনে। টেলিভিশনের পর্দায় একসময়ে যে হাসিমুখে দর্শক মুগ্ধ হয়েছিল, আজও সেই হাসিতে এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে। সেই মায়ার নাম মোজেজা আশরাফ মোনালিসা। বাংলাদেশের ছোট পর্দার সেই প্রিয় মুখ, যিনি একসময় প্রতিটি ঘরে ঘরে ছিলেন পরিচিত, ভালোবাসার নাম। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
আজ তার জন্মদিন। কিন্তু মোনালিসাকে শুধু জন্মদিনে মনে করা যায় না-তিনি সেই শিল্পী, যিনি নীরব থেকে, আলো থেকে দূরে থেকেও, দর্শকের মনে জায়গা ধরে রেখেছেন এক অনন্ত সময়ের জন্য।
-
মোনালিসার জন্ম ঢাকায়, এক স্নেহময় পরিবেশে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন শিল্পমনস্ক। অন্য বাচ্চারা যখন পুতুল নিয়ে খেলে, তখন তিনি আয়নার সামনে নাচের মুদ্রা অনুশীলন করতেন।
-
নৃত্যই ছিল তার প্রথম ভালোবাসা। মাত্র ১০ বছর বয়সেই মঞ্চে নাচ শুরু করেন। সেই নাচই পরবর্তীতে তাকে এনে দেয় অভিনয় আর মডেলিং জগতের দরজা খোলার সুযোগ।
-
তার শুরুর জীবনটা ছিল পরিশ্রমে ভরা। একাধারে পড়াশোনা, নাচের প্রশিক্ষণ, শুটিং-সবই চালিয়ে গেছেন অবিচল মনোযোগে।
-
বাংলাদেশি টেলিভিশনের সোনালি যুগে, নব্বইয়ের দশকের শেষ ও ২০০০ সালের শুরুতে দর্শকরা এক নতুন মুখ দেখতে পান মোনালিসা। তার চোখের চাহনি, স্বাভাবিক সংলাপ, নিখুঁত অভিব্যক্তি আর সৌম্য উপস্থিতি তাকে দ্রুতই আলাদা করে তোলে।
-
‘কাগজের ফুল’, ‘বয়স যখন একুশ’, ‘তৃষ্ণা’ কিংবা ‘চিরকুট’ এই নাটকগুলো শুধু জনপ্রিয়ই হয়নি, বরং সেই সময়ের যুব সমাজের আবেগের অংশ হয়ে উঠেছিল।
-
তবে মোনালিসা কেবল অভিনেত্রী নন, তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ পারফর্মার। নৃত্য, মডেলিং, উপস্থাপনা, অভিনয়-সব জায়গাতেই তার ছোঁয়া সমান স্নিগ্ধ।
-
শোবিজ জগতের ঝলমলে আলোয় থাকা সহজ নয়। জনপ্রিয়তা যেমন আসে, তেমনি আসে অবিরাম বিচার-বিশ্লেষণ। মোনালিসা সবসময়ই এই চাপগুলোকে সামলেছেন নীরবে, প্রফেশনালভাবে। তিনি কখনও কেলেঙ্কারি বা গসিপের শিরোনাম হননি, বরং নিজেকে প্রমাণ করেছেন পরিশ্রম আর সৌজন্যে।
-
ব্যক্তিজীবনে ২০১২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী ফয়সাজ শরীফকে বিয়ে করেন। কিছু বছর পর বিচ্ছেদ ঘটে এবং তিনি পাড়ি জমান আমেরিকায়। কিন্তু সেখানে থেকেও শিল্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। কাজ করেছেন সৌন্দর্য পরামর্শদাতা হিসেবে, যুক্ত থেকেছেন মঞ্চ আর ফ্যাশন ইভেন্টে।
-
প্রবাস জীবনে কাটানো সময় তাকে আরও পরিণত করেছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘শিল্প তো কেবল পেশা নয়, এটা আমার শ্বাস-প্রশ্বাস। যত দূরেই থাকি, আমি আসলে সেই মঞ্চেই বেঁচে আছি।’
-
বয়স, জনপ্রিয়তা, অবস্থান-এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে মোনালিসা আজ এক প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন, সফলতা মানে কেবল উপস্থিত থাকা নয়; সফলতা মানে স্মৃতিতে টিকে থাকা। যে শিল্পীকে সময় মুছে ফেলতে পারে না, তিনি সময়েরই অংশ হয়ে যান।