এক নজরে শেফালি জরিওয়ালার জীবনগাঁথা
যেন হঠাৎ ঝড়ের বেগে এসেছিলেন, আলোড়ন তুলে আবার যেন হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেলেন শেফালি জরিওয়ালা। ‘কাঁটা লাগা’ গানে আবেদনময়ী উপস্থিতির মাধ্যমে যিনি বদলে দিয়েছিলেন ভারতের পপ মিউজিক ভিডিওর ধারা, তার জীবন শুধু গ্ল্যামারের ছিল না, ছিল লড়াই ও নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অবিরাম যাত্রা। মডেলিং, সিনেমা, রিয়েলিটি শো থেকে শুরু করে সামাজিক বার্তাবাহী ভূমিকা; সবখানেই নিজের মতো করে উপস্থিত ছিলেন শেফালি। এই গ্যালারিতে তুলে ধরা হলো আলো-ছায়ার সেই সংক্ষিপ্ত কিন্তু বহুমাত্রিক জীবনগাঁথা। ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
-
২৭ জুন দিবাগত রাতে আকস্মিকভাবে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন হিন্দি পপ ভিডিও জগতের এক আইকনিক মুখ, শেফালি জরিওয়ালা। মাত্র ৪২ বছর বয়সেই থেমে গেল এক সাহসী, সংগ্রামী ও বর্ণময় নারীর পথচলা।
-
‘কাঁটা লাগা’ গানের আবেদনময়ী মডেল হিসেবে যিনি রাতারাতি ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ায় পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন, তার জীবনের পর্দার আড়ালের গল্পগুলো আজও অনেকের অজানা।
-
১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই নাচ ও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী এবং মা গৃহিণী। শেফালির বেড়ে ওঠা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পরিমিত অথচ সাহসী পরিবেশে।
-
আহমেদাবাদ থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন শেফালি। তিনি স্নাতক হন ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে। তবে ক্যারিয়ার হিসেবে প্রযুক্তি জগত নয়, তার আকর্ষণ ছিল ক্যামেরার ঝলকানির দিকেই।
-
কলেজ জীবনে অংশ নিয়েছিলেন নানা মডেলিং প্রতিযোগিতায় এবং সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বিনোদন অঙ্গনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে।
-
২০০২ সালে একটি হিন্দি রিমিক্স ভিডিও তার ভাগ্য বদলে দেয় ‘কাঁটা লাগা’। মূলত ৭০’র দশকের একটি হিন্দি গানের রিমিক্স ভার্সনে মডেল হিসেবে কাজ করেন শেফালি, আর সেখানে তার আবেদনময়ী উপস্থিতি, সাহসী সাজ ও দুর্দান্ত নাচ এক মুহূর্তেই তাকে এনে দেয় জাতীয় পরিচিতি। সেসময় ‘আইটেম গার্ল’ শব্দটির সংস্কৃতি পুরোপুরি গড়ে না উঠলেও শেফালি যেন তার রূপায়ণ করেছিলেন।
-
তার চুলে ব্রাউন স্ট্রিকস, পেটখোলা পোশাক এবং ক্যামেরার সামনে সাহসী উপস্থিতি ভারতীয় দর্শকের মধ্যে এক ধরণের আলোড়ন তোলে। এই ভিডিওই তাকে এনে দেয় ‘থোং গার্ল’ বা ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ উপাধি।
-
‘কাঁটা লাগা’র জনপ্রিয়তা শেফালিকে নিয়ে আসে বলিউডের কাছেও। তিনি ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুজসে শাদি করোগি’ সিনেমায় একটি আইটেম গানে পারফর্ম করেন সালমান খান ও অক্ষয় কুমারের সঙ্গে।
-
সিনেমা জগতে তার উপস্থিতি সীমিত হলেও চোখে পড়ার মতো ছিল। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন ও মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেন তিনি।
-
শেফালি জরিওয়ালা ২০০৫ সালে মিউজিক কম্পোজার হারমিত সিংকে বিয়ে করেন। তবে সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০০৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাদের।
-
পরে তিনি অভিনেতা পারাগ ত্যাগীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। পারাগের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল স্থিতিশীল ও সম্মানীয়।
-
তারা একসঙ্গে বহু রিয়েলিটি শো ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
-
শেফালি শুধু গ্ল্যামারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। একসময় তিনি মানসিক স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও দত্তক শিশু গ্রহণ- এই বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিকভাবে সচেতন ভূমিকা পালন করেছেন।
-
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মানসিক শান্তি সবচেয়ে বড় সম্পদ, এবং মেয়েদের নিজেকে ভালোবাসতে শেখা খুব জরুরি।’
-
তিনি ‘নাচ বলিয়ে ৫’ ও ‘বিগ বস ১৩’-এর অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিযোগী ছিলেন। বিশেষ করে ‘বিগ বস’-এ তার স্পষ্টভাষী চরিত্র, আত্মবিশ্বাসী আচরণ ও উদার মানসিকতা দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
-
শেফালির উপস্থিতি বলিউডে হয়তো খুব দীর্ঘস্থায়ী ছিল না, কিন্তু তার একটিমাত্র মিউজিক ভিডিও গোটা এক প্রজন্মের ফ্যাশন ও সাংস্কৃতিক ধারা পাল্টে দিয়েছিল।
-
‘কাঁটা লাগা’ গানটি একাধারে ভারতীয় মিউজিক ভিডিও জগতের সাহসী প্রকাশভঙ্গি, গ্ল্যামার ও নারীর শরীরী ভাষার স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
-
২০২৫ সালের ২৭ জুন রাতে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন শেফালি জরিওয়ালা। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মাত্র ৪২ বছর বয়সেই থেমে গেল এক সাহসী নারীর সংগ্রামী যাত্রা।
-
তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে বলিউড থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্তরাও শোকাহত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মরণ করছেন ‘কাঁটা লাগা’ গানের সেই ঝড় তোলা মুহূর্তকে। মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন স্বামী পারাগ ত্যাগী।