চলচ্চিত্রের হাস্যরস আর হৃদয়ের মায়ায় অনন্য খরাজ
কেউ কেউ জন্মান অভিনয়ের জন্য, আর কেউ কেউ অভিনয়কে নিজের সত্তার সঙ্গে এমনভাবে মিশিয়ে ফেলেন, যে তারা হয়ে ওঠেন চরিত্রের মূর্ত প্রতিচ্ছবি। খরাজ মুখোপাধ্যায় ঠিক তেমনই একজন শিল্পী; যিনি শুধু অভিনেতা নন, বাংলা চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত অধ্যায়। আজ তার জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক এই বহুমাত্রিক প্রতিভাবান অভিনেতার জীবনের গল্প, সংগ্রাম, সাফল্য ও আমাদের মনে গেঁথে থাকা স্মৃতির খণ্ডচিত্র। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৬৩ সালের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাটে তার জন্ম। সাদামাটা এক পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা খরাজ প্রথম থেকেই ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী।
-
স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে তিনি ভর্তি হন কলকাতার বিখ্যাত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে নাট্যচর্চার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে তার। সেখানেই তৈরি হয় তার অভিনয়ের প্রতি এক অদম্য আকর্ষণ।
-
প্রথমে সরকারি চাকরির নিরাপদ গণ্ডি পেরিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন রূপালি পর্দার অনিশ্চিত পথে। সাহসিকতার সেই সিদ্ধান্ত আজ আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রকে যা কিছু দিয়েছে, তা অমূল্য।
-
খরাজ মুখোপাধ্যায় মানেই হাস্যরস, অথচ শুধুই কমেডি নয়-তিনি পারেন কাঁদাতে, ভাবাতে, চমকে দিতেও। তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালের ‘হুলুস্থুল’ সিনেমা দিয়ে। এরপর ‘পাথরের খোদা’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘পাথের পাঁচালী’, ‘বেলা শেষে’, ‘হামি’, ‘বেলাশুরু’-প্রতিটি সিনেমাতেই খরাজ অভিনয় করেছেন এমনভাবে, যেন চরিত্রটি তার শরীরের অংশ।
-
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর প্রমোদ প্রাধান চরিত্র কিংবা ‘হামি’ র অভিভাবক, অথবা ‘কাহানি’ তে পুলিশ অফিসার, সবেতেই তিনি নিজের অভিনয় দিয়ে প্রমাণ করেছেন-তিনি শুধু সহ-অভিনেতা নন, বরং চরিত্রের প্রানসঞ্চারক। এমনকি হিন্দি সিনেমা ‘পারিণীতা’, ‘নেমসেক’, ‘স্পেশাল ২৬’-এ তার সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি দর্শকের মন জয় করেছে।
-
অনেকে জানেন না, খরাজ কেবল অভিনেতা নন, একসময় গায়ক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘পাতালঘর’ সিনেমায় তার কণ্ঠের জন্য তিনি পেয়েছিলেন পুরস্কারও।
-
অভিনয়ের বাইরে তিনি একজন দারুণ রাঁধুনিও। সময় পেলে নিজের হাতে রান্না করেন স্ত্রী-সন্তানের জন্য। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, জীবনে যতই ব্যস্ততা থাক, রান্নার মধ্যে এক ধরণের মানসিক শান্তি পাই।
-
খরাজ মুখোপাধ্যায়ের ব্যক্তিজীবনও অনেক অনুপ্রেরণাদায়ক। স্ত্রী প্রতিভা মুখোপাধ্যায় সবসময় তার পাশে থেকেছেন ছায়ার মতো। অভিনেতা নিজেই বলেন, ‘ও না থাকলে আমি আজ এতদূর আসতে পারতাম না।’
-
বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা থাকলেও খরাজ বারবার বলেছেন, তার আসল পুরস্কার দর্শকের ভালোবাসা। ‘আপনাদের হাসাতে পারা, চোখে জল এনে দিতে পারা, এটাই তো জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা’ এ কথা বলতে বলতে চোখে জল এসে যায় এই সংবেদনশীল অভিনেতার।