অটো টিউনের জাদুকর নাকি হিট মেশিন? হিমেশ রেশামিয়ার গল্পটা অন্যরকম
বলিউডের সঙ্গীতজগতে এমন কিছু নাম আছে যাদের নিয়ে হাস্যরস, বিতর্ক আর প্রশংসা পাশাপাশি চলে। হিমেশ রেশামিয়া ঠিক তেমনই এক চরিত্র; যার কণ্ঠে কেউ মুগ্ধ, কেউ বিরক্ত, কিন্তু উপেক্ষা করার সুযোগ নেই একটুও। তিনি ‘অটো টিউনের জাদুকর’ বলেই পরিচিত, আবার কেউ বলেন ‘হিট মেশিন’। দুই পরিচয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে হিমেশ গড়েছেন এক ব্যতিক্রমী সাফল্যের সুরপথ। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৭৩ সালের এই দিনে মুম্বাইয়ে তার জন্ম। হিমেশের বাবা বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য পাওয়া একজন গায়ক ও সুরকার ছিলেন, যিনি ছেলেকে সুর আর তাল শেখার হাতেখড়ি দেন।
-
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই হিমেশ গান তৈরি করতে শুরু করেন। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল খুব স্পষ্ট বলিউডে নিজের জায়গা করে নেওয়া।
-
১৯৯৮ সালে সালমান খানের হাত ধরে হিমেশ সুযোগ পান ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’ ছবিতে। তবে তার বড় ব্রেক আসে ২০০৩ সালে ‘তেরে নাম’ ছবির সুরকার হিসেবে।
-
‘তেরে নাম’, ‘তুমসে মিলনা’, ‘ক্যায়া ইয়ে হি প্যারে হ্যায়’ সবগুলো গানই দর্শকমনে গেঁথে যায়। হিমেশের সুর তখন প্রেমে পড়া বলিউডের শ্রোতাদের হৃদয়ভরানো আবেগের ভাষা।
-
২০০৫ সাল। ‘আশিক বানায়া আপনে’ ছবির শিরোনাম গানটি গেয়ে রাতারাতি গায়ক হিমেশ রেশামিয়া পরিচিতি পান। তার নাসাল টোন, ব্যতিক্রমী উচ্চারণ ও অটো টিউনের ব্যবহার নিয়ে অনেকে ঠাট্টা করলেও, গানটি চার্টবাস্টার হয়।
-
এরপর একের পর এক হিট ‘ঝালাক ডিখলা যা’, ‘আপ কি কাশিশ’, ‘তেরে সঙ্গ ইস কদর’, ‘আফতাব’, ‘তেরে নাম’, ‘আহিস্তা আহিস্তা’ বলিউডে হিমেশ হয়ে ওঠেন নতুন যুগের সুরের প্রতিনিধি।
-
হিমেশের গান মানেই যেন সহজ লিরিক, ক্যাচি হুক লাইন আর উচ্চস্বরে ভোকাল। অনেকেই একে বলতেন ‘কমার্শিয়াল সাউন্ড’ বা ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’ অর্জনের চেষ্টা। কিন্তু প্রশ্ন হলো যা কোটি মানুষ শুনছে, গাইছে, সেটি কি কেবল সস্তা? হিমেশের গান পপুলার সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল একসময়।
-
তিনি ২০০৬ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান ‘আশিক বানায়া আপনে’ গানের জন্য, যা তার সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেয়।
-
নিজের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে হিমেশ ২০০৭ সালে ‘আপ কা সুরুর’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে নায়ক হিসেবে অভিষেক করেন। যদিও অভিনয়ে তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল, ছবিটি ছিল বক্স অফিস হিট।
-
পরবর্তীতে ‘কার্জ’, ‘রেডিও’, ‘খিলাড়ি ৭৮৬’ এর মতো কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন, কিন্তু সেগুলো তেমন সাড়া ফেলেনি।
-
হিমেশ রেশামিয়া ভারতের একাধিক গানের রিয়েলিটি শো-তে বিচারকের ভূমিকা পালন করেছেন। ‘সা রে গা মা পা’, ‘দ্য ভয়েস ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ এর মতো শো-তে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় মুখ।
-
প্রতিযোগীদের সঙ্গে তার আবেগমিশ্রিত যোগাযোগ ও অনুপ্রেরণাদায়ক কথাবার্তা তাকে পরিচিত করে তোলে নতুন প্রজন্মের ‘গুরু’ হিসেবে।
-
হিমেশ রেশামিয়া আজকের ডিজিটাল যুগেও প্রাসঙ্গিক। তার গান রিমিক্স হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, আর তরুণ প্রজন্মের মিম সংস্কৃতিতে সে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, জনপ্রিয়তা মানেই কণ্ঠের সৌন্দর্য নয়, বরং শ্রোতার মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন।
-
কেউ বলেন, হিমেশের কণ্ঠ ভালো না। কেউ বলেন, অটো টিউন ছাড়া কিছুই করেন না। আবার কেউ বলেন, তিনিই একমাত্র সুরকার, যিনি ‘আশিক বানায়া আপনে’ থেকে শুরু করে শত হিট দিয়েছেন এককভাবে। এই আলোচনার মাঝেই হিমেশ নিজের মতো করে হেঁটে চলেছেন। তিনি প্রথাগত নন, কিন্তু সফল। তার সুরের ধারা একেবারে আলাদা, যা সমালোচনার মধ্যেও শ্রোতার হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়।