সাউন্ডট্র্যাক থেকে সুপারস্টারডম, বিজয় অ্যান্টনির অনন্য জার্নি
একজন মানুষ যখন একাধারে সুরকার, গায়ক, অভিনেতা, সম্পাদক, পরিচালক এবং প্রযোজক তখন তার জীবনগল্প নিছক এক ক্যারিয়ার নয়, হয়ে ওঠে এক অনুপ্রেরণার মহাকাব্য। তেমনই এক অনন্য নাম বিজয় অ্যান্টনি। আজ জন্ম নেওয়া এই বহুমাত্রিক প্রতিভাধর ব্যক্তি তামিল বিনোদন জগতকে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী সৃষ্টি। সাউন্ডট্র্যাক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ তিনি নিজেই পর্দার এক অবিচ্ছেদ্য মুখ। বিজয়ের এই রূপান্তর কেবল পেশাগত নয়, বরং এটি আত্মপরিচয় খোঁজার এক আবেগঘন অভিযাত্রাও। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
২০০৫ সালে ‘সুকরণ’ ছবির মাধ্যমে বিজয় অ্যান্টনি প্লেব্যাক সিঙ্গার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। তবে আসল পরিচিতি আসে ২০০৯ সালে ‘নাক্কা মুক্কা’ গানের মাধ্যমে, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময়ও বাজানো হয়। এর উচ্চমাত্রার শক্তি ও ছন্দময়তা তাকে রাতারাতি তামিল সংগীতজগতের সুপারস্টার করে তোলে।
-
বিজয়ের গানগুলোতে ছিল একধরনের বিদ্রোহী আবেদন, সাধারণ গানের তুলনায় আলাদা এক নিজস্ব ঢং, যা তরুণ প্রজন্মের মনে তীব্রভাবে প্রভাব ফেলে।
-
সাফল্যের শীর্ষে থাকা অবস্থাতেই তিনি অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যা অনেকের চোখে ছিল একপ্রকার ঝুঁকি। ২০১২ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘নান্না’। সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও বিজয়ের অভিনয়ের স্বাভাবিকতা দর্শকদের নজর কাড়ে।
-
এরপর আসে ‘পিচাইকারান’ (২০১৬) একজন ধনী উত্তরাধিকারী যিনি তার মাকে বাঁচাতে সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নেন। ছবিটি বিজয়কে শুধুই জনপ্রিয় অভিনেতা নয়, বরং ‘জনতার নায়ক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সমাজের বাস্তব সংকট, নিঃস্ব মানুষের যন্ত্রণা, মা-ছেলের মায়া সব কিছুই একত্রে ফুটে ওঠে বিজয়ের নিঃশব্দ অথচ গভীর অভিনয়ে।
-
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ এক ধাক্কা খান বিজয় অ্যান্টনি তার কন্যা মীরা আত্মহত্যা করে। সেই ধাক্কা যেকোনো বাবার জন্য অপূরণীয়, অপারগ মুহূর্ত। বিজয় কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বরং তিনি নিজেকে মেয়ের স্মৃতিতে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। নিজের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সম্পাদনার কাজ আরও নিবিষ্টভাবে শুরু করেন।
-
এই মানসিক দৃঢ়তা, আত্মশক্তির প্রকাশ এবং পারিবারিক শোককে শিল্পে রূপান্তর করার ক্ষমতা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। অনেকেই যেটাকে ভাঙন ধরে ফেলত, বিজয় সেটাকেই বানিয়েছেন সৃষ্টির রসদ।
-
বিজয় অ্যান্টনির সিনেমাগুলো একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের। যেখানে নেই অতিরিক্ত বাণিজ্যিকতা, নেই অপ্রাসঙ্গিক গান বা অযথা মারামারি। তার চরিত্রগুলো সাধারণত চুপচাপ, আবেগপ্রবণ কিন্তু প্রয়োজন হলে দারুণ সাহসী। এই ঘরানাটি এতটাই অনন্য যে দর্শকরা এখন ‘বিজয় অ্যান্টনি ফিল্ম’ মানেই আলাদা কিছু আশা করে।
-
তিনি একাধারে অভিনয় করেন, নিজের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেন, সম্পাদনা করেন-এমনকি কখনো কখনো পরিচালনাও করেন। একজন মানুষ যখন পুরো একটি চলচ্চিত্র নিজের কাঁধে তুলে নেন, তখন সেটা কেবল ‘চলচ্চিত্র’ নয় তা হয়ে ওঠে তার আত্মপ্রকাশের মাধ্যম।
-
বিজয় অ্যান্টনি কখনোই পুরস্কার বা গ্ল্যামারের পেছনে ছোটেননি। বরং সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে কাজ করাই তার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্য।
-
এই আন্তরিকতা, এই সত্যনিষ্ঠাই তাকে দিয়েছে আলাদা অবস্থান। তার সিনেমা হয়তো বড় বাজেটের নয়, তবু তার আবেদন বহু গুণ বেশি।