‘কাল হো না হো’ বলেই তিনি আজীবন মনে থাকবেন
কিছু গান থাকে, যেগুলো শোনা মানেই চোখ ভিজে যাওয়া। কিছু কণ্ঠ থাকে, যেগুলোর আবেগ ছুঁয়ে যায় আত্মার গভীরে। সোনু নিগম তেমনই এক নাম যিনি শুধু গান গেয়ে যান না, গেয়ে যান হৃদয়ের গল্প। তার গলায় যেন জীবনের হাসি-কান্না, ভালোবাসা আর হারিয়ে ফেলার সমস্ত অনুভব এক হয়ে যায়। বলিউডের অসংখ্য মন ছুঁয়ে যাওয়া গানের মধ্যে ‘কাল হো না হো’ কেবল একটি গান নয়, এটি একটি আবেগ, একটি উপলব্ধি-যা জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও ভালোবাসার গভীরতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বারবার। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৭৩ সালের এই দিনে ফরিদাবাদ শহরে এক কায়স্থ পরিবারে তার জন্ম। মাত্র চার বছর বয়সে তার বাবা আগাম কুমার নিগমের সঙ্গে মহম্মদ রফির ‘ক্যা হুয়া তেরে ওয়াদা, ও কসম ও ইরাদা’ গানটি দিয়ে স্টেজে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন।
-
তারপর সোনু তার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন। এরপরই মাত্র ১৯ বছর বয়সে বলিউডে গান গাওয়ার জন্য সোনু তার বাবার হাত ধরে মুম্বই শহরে চলে আসেন। তিনি বিখ্যাত ক্লাসিক্যাল শিল্পী ওস্তাদ গোলাম মোস্তফা খানের কাছে সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন।
-
সুর আর সাধনায় কাটিয়ে দেওয়া সেই শৈশব একসময় জন্ম দেয় বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পীকে।
-
‘সন্দেশে আতে হ্যায়’, ‘অভি মুঝ মে কহি’, ‘সুরজ হুয়া মাধম’ কিংবা ‘সাথিয়া’ প্রতিটি গান যেন তার সুরে বেঁধে রেখেছে সময়কে। কিন্তু ‘কাল হো না হো’ দিয়ে তিনি যা করেছেন, তা যেন কোনো এক অদৃশ্য আবেগের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী।
-
২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কাল হো না হো’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকটি শুনে চোখ ভিজেনি, এমন শ্রোতা বিরল। জাভেদ আখতারের লেখা কথাগুলোর মধ্যে যে দর্শন, প্রীতমের সুরে যে আবেশ, তার চেয়েও বেশি যেটি মন ছুঁয়েছিল-তা হলো সোনু নিগমের গলায় সেই অতল বেদনার বহিঃপ্রকাশ।
-
এই গান যেন আমাদের শিখিয়ে দেয় ভালোবাসো আজকেই, জানিয়ে দাও অনুভব, কারণ আগামীকাল হয়তো আসবেই না। আর এই জীবনবোধ তিনি নিজের কণ্ঠে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যে গানটা হয়ে উঠেছে মানুষের আত্মার প্রতিধ্বনি। আজও যখন গানটি কোথাও বাজে, মনে হয় যেন সময় থেমে যায়।
-
সোনু নিগমের প্লেব্যাক কেরিয়ার অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। তিনি শুধু রোমান্টিক গানেই নয়, ভক্তিমূলক সংগীত, পাঞ্জাবি, বাংলা, তামিল, তেলেগু-প্রতিটি ভাষা ও ঘরানায় রেখেছেন নিজের ছাপ। তার কণ্ঠে ‘অভি মুঝ মে কহি’ যেন নিঃশব্দে বয়ে আনে এক আশ্চর্য নীরবতা, আবার ‘ম্যায় আগার কহুঁ’ হয়ে ওঠে ভালোবাসার বিনয়ী কবিতা।
-
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও ‘কাল হো না হো’ যেন হয়ে উঠেছে তার কণ্ঠের প্রতীক। এই গান তার শিল্পীসত্তার প্রতিচ্ছবি, যেটি আজীবন মনে থাকবে সঙ্গীতপ্রেমীদের।