শান্ত সৌন্দর্যের ঝলক, কিয়ারার ভিন্নধর্মী বলিউড উপস্থিতি
কান্নার দৃশ্যেও তার চোখে থাকে এক অপূর্ব প্রশান্তি। প্রেমে পড়া দৃশ্যেও সে কাঁপে না, বরং তাকিয়েই গল্প বলে দেয়। বলিউডের যে কটি মুখ কম শব্দে, কম রঙে, নীরব সৌন্দর্যে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে, কিয়ারা আদবানি নিঃসন্দেহে তাদের একজন। বলিউডের রঙিন জগতে প্রতিনিয়তই নতুন মুখ আসছে, কেউ ঝলকে হারিয়ে যাচ্ছে, কেউ আলোয় ফুটছে। তবে কিয়ারা আদভানির যাত্রাটা ঠিক স্রোতের মতো নয়, বরং মৃদু অথচ দৃঢ়। তিনি চিৎকার করেন না, চরিত্রে নিজেকে গলিয়ে দেন। চমক দিয়ে নয়, ধৈর্য দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজস্ব জায়গা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
১৯৯১ সালের এই দিনে ভারতের মুম্বাইয়ে তার জন্ম। বলিউডের কেন্দ্রস্থল এই শহরেই কেটেছে তার শৈশব, কৈশোর এবং শিক্ষাজীবন। পিতা জগদীপ আদভানি একজন ব্যবসায়ী এবং মা জিনেভিভ জাফরি, যিনি স্কটিশ ও মুসলিম–পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত। তার রক্তের মধ্যে রয়েছে বহুধারার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেল, যা তার ব্যক্তিত্বে এবং পর্দার উপস্থিতিতেও কখনো কখনো ফুটে ওঠে।
-
কিয়ারা আদভানির আসল নাম ছিল আলিয়া। নিজের প্রথম সিনেমা ‘ফুগলে’ দিয়ে বলিউডে পা রাখলেও তার যাত্রাপথ খুব সহজ ছিল না। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল সিনেমার বাইরে, ফলে প্রথম সারির নির্মাতাদের নজরে আসা তার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু কিয়ারা হাল ছাড়েননি। ধৈর্য ধরেছেন, নিজের দক্ষতা ও সৌন্দর্য দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ধীরে ধীরে।
-
সিনেমার পালে হাওয়া লাগে ‘কবির সিং’ এর পর। সিনেমায় তিনি ছিলেন প্রীতির ভূমিকায়-চুপচাপ, সংবেদনশীল, নরম অথচ দৃঢ়। এই চরিত্র দিয়েই তিনি দর্শকদের মন ছুঁয়ে যান। বলিউডে তখন নায়িকারা চিৎকার করে, বিদ্রোহ করে শক্তি দেখাচ্ছিলেন; সেখানে কিয়ারা তার নীরব উপস্থিতিতেই বলে দিয়েছিলেন নারীর শক্তি উচ্চারণে নয়, অবস্থানে।
-
সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত ‘শেরশাহ’ সিনেমায় ডিম্পলের ভূমিকায় কিয়ারা তার ক্যারিয়ারের এক অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন। যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া প্রিয় মানুষের জন্য যে নায়িকা প্রতীক্ষা করে, বাঁচে, তাকে শ্রদ্ধা করে, কিয়ারা সে চরিত্রে সত্যিই বেঁচে উঠেছিলেন। এই সিনেমাতেই প্রথমবারের মতো পর্দায় দেখা যায় কিয়ারা-সিদ্ধার্থ জুটিকে, যা পরবর্তীতে বাস্তব জীবনের সম্পর্কেও রূপ নেয়।
-
কিয়ারা আদবানি শুধু অভিনেত্রী নন, ফ্যাশন জগতেও এখন তিনি পরিচিত নাম। তার স্টাইল কখনোই চটকদার নয়; বরং সাবলীলতা, ক্লাস আর আধুনিকতার মিশেল থাকে তার সাজপোশাকে। ভারী গয়না নয়, হালকা লুকেই কিয়ারা নজরকাড়েন সবার।
-
বর্তমান বলিউডে যেখানে আত্মপ্রচারণা, বিতর্ক আর স্ক্যান্ডাল অনেক তারকার আলোচনার মূল কারণ, সেখানে কিয়ারা রয়ে গেছেন নিরব, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কম কথা বলা একজন মানুষ। মিডিয়ার সঙ্গে তার আচরণ সবসময় বিনীত, নম্র।
-
সিদ্ধার্থ মালহোত্রার সঙ্গে সম্পর্ক, প্রেম এবং বিয়ের গল্প যেন এক আধুনিক রূপকথা। ‘শেরশাহ’ সিনেমায় তাদের প্রেম যেমন ছুঁয়ে গিয়েছিল দর্শককে, বাস্তব জীবনের সম্পর্কও তেমনি প্রশংসিত হয়েছে। নিজের জন্মদিন হোক কিংবা ব্যক্তিগত অর্জন, কিয়ারা সবসময় নিজের জীবনকে রেখেছেন পরিমিত আলোয়, অহেতুক প্রচারে নয়।
-
কিয়ারা আদভানি তারকা, কিন্তু নিজেকে কখনোই ‘তারকা’ বলে জাহির করেননি। তাকে আলাদা করে চেনা যায় তার শান্ত চোখের ভাষায়, পর্দায় তার সংবেদনশীল অভিনয়ে এবং বাস্তব জীবনের প্রাঞ্জলতার মাঝে।
-
শব্দে নয়, নীরব সৌন্দর্যে কিয়ারা যেন এক আধুনিক নারীর প্রতিচ্ছবি; যিনি নিজের জায়গা নিজেই গড়ে তোলেন, কোলাহলে নয়, গভীরতায়।