৯০ দশকের পোস্টার গার্ল, আজও ঝলমলে কাজল
দেয়ালে টাঙানো সিনেমার পোস্টারে চোখে কাজলের গভীর চাহনি। কখনো একঝলকে তাকিয়ে থাকা ‘সিমরান’, কখনো বা রাগে–অভিমানে মুখ গোমড়া ‘অঞ্জলি’। ৯০-এর দশকের কিশোর-কিশোরীদের প্রেমে পড়ার বয়সে যারা বড় হয়েছেন, তাদের শৈশব কিংবা কৈশোরে একবার না একবার কাজলের কোনো ছবির পোস্টার বুকসেলফের পাশে কিংবা স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে রাখা ছিল। সে সময়ের পোস্টার গার্ল বললে যে কয়জন অভিনেত্রীর নাম উচ্চারণ করা হয়, তাদের তালিকায় সবচেয়ে উপরে যে নামটি ঝলমল করে সেটি হচ্ছে কাজল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
যখন বলিউডে রূপ ও গ্ল্যামার নির্ভর নায়িকাদের দাপট, তখন নিজের ঘন ভ্রু, গাঢ় চোখ ও সরল অথচ প্রাণবন্ত হাসি নিয়ে কাজল যেন এক বিকল্প সৌন্দর্যের নাম হয়ে উঠলেন। তিনি ‘পারফেক্ট লুকস’ এর বাঁধাধরা সংজ্ঞা ভেঙে দিয়ে দেখালেন মেধা, আত্মবিশ্বাস আর ব্যক্তিত্বই আসল সৌন্দর্য।
-
১৯৯২ সালে ‘বেখুদি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও, জনপ্রিয়তা আসে ১৯৯৩ সালে ‘বাজিগর’ এর পর।
-
শাহরুখ খানের সঙ্গে জুটি বাঁধা সেই শুরু, যা পরবর্তী দশকে বলিউডের অন্যতম আইকনিক অনস্ক্রিন জুটিতে রূপ নেয়।
-
১৯৯৫ সালের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ কাজলের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ট্রেন ধরার সেই দৃশ্য, ‘জী লে আপনী জিন্দেগি’ ডায়লগ-সবকিছুই সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব প্রেমিক–প্রেমিকাদের আদর্শ হয়ে ওঠে।
-
এরপর ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ এর টমবয় অঞ্জলি, ‘কাভি খুশি কাভি গম’-এর গাঁদাগন্ধ বাঙালি মেয়ে অনজু, কিংবা ‘মাই নেম ইজ খান’ এর গভীর অথচ ভাঙা মায়া, প্রতিটি চরিত্রেই কাজল যেন এক নতুন ব্যাখ্যা।
-
তিনি ছিলেন সেই অভিনেত্রী, যিনি একইসঙ্গে মেইনস্ট্রিম বাণিজ্যিক সিনেমা এবং অর্থবহ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক ও সমালোচক, উভয়ের হৃদয় জয় করেছেন।
-
কাজল কখনোই নিজেকে পারফেক্ট বানাতে ব্যস্ত ছিলেন না। তিনি বরং খুঁতসহ নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন। ক্যামেরার বাইরে স্পষ্টভাষী, ঠোঁটকাটা এবং মজার মানুষ-এই কাজলও দর্শকের প্রিয় হয়ে উঠেছে বারবার।
-
১৯৯৯ সালে অজয় দেবগনের সঙ্গে বিয়ে, এরপর মাতৃত্ব তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও মানুষ আগ্রহী থেকেছে, কিন্তু কাজল কখনোই স্টারডম দিয়ে নিজের পরিবার বা আত্মপরিচয়কে ঢেকে দেননি। বরং তার জীবনযাপন, শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য, বইপড়ার অভ্যাস কিংবা সমাজ সচেতন বক্তব্য-সবই তাকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক ও প্রিয় করে তুলেছে।
-
অগণিত ফ্যানের ভালোবাসা, বড়পর্দার সফল জার্নি, জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার সম্মাননা সবকিছুই প্রমাণ করে কাজল কেবল এক অভিনেত্রীর নাম নয়, এক অনুভবের নাম।
-
সময়ের সঙ্গে বলিউড বদলেছে, নতুন মুখ এসেছে কিন্তু কাজলের মতো এমন বহুমাত্রিক প্রতিভা, যিনি একইভাবে কমেডি, রোমান্স ও ড্রামা সব রকম ঘরানায় সাবলীল, তার উপস্থিতি আজও স্বতন্ত্র।
-
কাজল কেবল ৯০-এর নয়, এই সময়েরও নায়িকা। তার চোখের চাহনি এখনো অনেক গল্প বলে, তার হাসি এখনো মন ভালো করে দেয়।
-
পোস্টারের গার্ল থেকে বাস্তব জীবনের রোল মডেল, এই রূপান্তরটাই তো কাজলকে কাজল করে তোলে।