চোখের ভাষাতেই গল্প বলেন ফাহাদ ফাসিল
একটা চরিত্র যার হাতে নেই নায়কের মতো পাঞ্চলাইন, নেই অ্যাকশনের ঝাঁঝ কিংবা চোখ ধাঁধানো রোমান্স। কিন্তু তবুও সে চরিত্র আপনার হৃদয়ে গেঁথে যায়। কারণ তার চোখ কথা বলে। তার নীরবতা হয়ে ওঠে গল্পের জোর। আর সেই চরিত্রের প্রাণ যদি হয়ে ওঠেন একজন অভিনেতা, তবে নিঃসন্দেহে তার নাম ফাহাদ ফাসিল। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
চোখ দিয়ে অভিনয়, এই কথাটা সাধারণত আমরা খুব কম অভিনেতার ক্ষেত্রেই বলি। কারণ অধিকাংশ অভিনেতার পারফরম্যান্স দাঁড়িয়ে থাকে সংলাপ, আবেগতাড়িত এক্সপ্রেশন বা দৃশ্যের ড্রামার ওপর। কিন্তু ফাহাদ যেন সেই বৃত্তের বাইরের কেউ। তিনি তার সংলাপ দিয়ে যতটা না বলেন, তার চেয়েও বেশি বলেন নীরব চাহনিতে। অভিনয়কে এক অন্য মাত্রায় তুলে নেওয়ার নাম যেন ফাহাদ ফাসিল।
-
ফাহাদের অভিনয়ে কখনো তাকে আলাদা করে চেনা যায় না। সে হয়ে ওঠে ‘মাহেশ’, কখনো বা ‘শামি’ বা ‘দিলেশ পানাচার’। দর্শক ভুলে যায় এটা একজন অভিনেতার পারফরম্যান্স। মনে হয়, সে চরিত্রটা যেন বাস্তবেই আছে কোথাও।
-
‘মাহেশিন্তে প্রতীক্ষা’ ছবির কথা ধরুন। এক গ্রামীণ ফটোগ্রাফারের চরিত্রে ফাহাদ এমনভাবে ধরা দিয়েছেন, যেন তিনিই মাহেশ। কোথাও অতিরঞ্জন নেই, নেই নাটকীয়তা। বরং আছে সংবেদনশীল এক নীরবতা, যে নীরবতার গভীরে লুকিয়ে থাকে যন্ত্রণার কুয়াশা।
-
‘ট্রান্স’ ছবিতে আবার তিনি একেবারে বিপরীত। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ঘেরা এক চরিত্র, যার প্রতিটি অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার হাহাকার। এই বৈচিত্র্য এবং গভীরতা তাকে আলাদা করে তোলে দক্ষিণ ভারতের অভিনেতাদের ভিড় থেকে।
-
‘ট্রান্স’ ছবিতে আবার তিনি একেবারে বিপরীত। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ঘেরা এক চরিত্র, যার প্রতিটি অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার হাহাকার। এই বৈচিত্র্য এবং গভীরতা তাকে আলাদা করে তোলে দক্ষিণ ভারতের অভিনেতাদের ভিড় থেকে।
-
বাণিজ্যিক সিনেমার ঝলমলে জগৎ যেখানে তারকাখ্যাতি আর বাহ্যিক আড়ম্বর নিয়ে মাতামাতি, সেখানে ফাহাদ ফাসিল এক অনন্য ব্যতিক্রম। তিনি স্টার হতে চেয়েছেন ঠিকই, তবে তার শর্ত ছিল সে স্টারডম হতে হবে চরিত্রের।
-
তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই ক্যামেরার সামনে ফাহাদ হয়ে উঠতে চাই না, আমি চরিত্র হয়ে উঠতে চাই।’ তাই তো ‘জোজি’, ‘থন্ডিমুথালাম দ্রিকসাক্ষিয়ুম’ কিংবা ‘কুম্বালাঙ্গি নাইটস’ এর মতো ছবিগুলোতে তার কাজ হয়ে ওঠে নিখুঁত, নির্ভার আর দুর্দান্তভাবে বাস্তব।
-
ফাহাদের চোখে এমন এক ভাষা আছে, যা কোনো ডায়ালগ দিয়ে বোঝানো যায় না। তার একেকটা দৃশ্য দেখে দর্শক আবিষ্কার করে অজস্র ব্যাখ্যা। কখনো সেখানে থাকে প্রেম, কখনো হতাশা, কখনো বা ভয়। অথচ সেই চোখগুলো থাকে একদম স্থির, শুধু সময় বুঝে বদলায় তাদের অর্থ।
-
‘চার্লি’ ছবিতে তার ছোট্ট উপস্থিতি কিংবা ‘আয়ালুম নজনুম তামিল’ এর সহজ-সরল প্রেমিক চরিত্র, প্রতিটা ক্ষেত্রেই তিনি কম বলে বেশি বোঝান। এবং সেখানেই লুকিয়ে থাকে তার অসাধারণতা।
-
চমৎকার এক পরিবারে জন্ম নেওয়া ফাহাদ ফাসিল তার বাবা পরিচালক ফাজিলের পরিচিতি কখনোই ব্যবহার করেননি ‘গডফাদার’ হিসেবে। বরং নিজের পথ নিজেই নির্মাণ করেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি সংযত, মিডিয়ার ঝলকানিতে না থাকা একজন শিল্পী। অভিনয়ই তার ধ্যান, তার জীবন। স্ত্রী অভিনেত্রী নাজরিয়া নাজিমের সঙ্গে তার সম্পর্কও তাই মিডিয়া-সেন্সেশন নয়, বরং এক প্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত-ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর সম্মানের এক ভারসাম্য।