শুভ জন্মদিন হাসির জাদুকর জনি লিভার
ভারতীয় চলচ্চিত্রে কমেডির জগতে যে কয়জন অভিনেতা নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছেন, তাদের মধ্যে জনি লিভার অন্যতম। তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, এক হাসির মহারথী। মুখে মিষ্টি হাসি, চোখে দুষ্টু ঝিলিক আর অসাধারণ সংলাপ ডেলিভারি এসব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বলিউডের অনন্য বিনোদনশিল্পী। আজ তার জন্মদিন, আর এদিনটা যেন হয়ে ওঠে তার অনুরাগীদের কাছে হাসি আর স্মৃতির এক উৎসব। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
জনি লিভারের আসল নাম জন প্রদীপ কুমার জনরাও। ১৯৫৭ সালের এই দিনে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের প্রাকাশম জেলায় জন্ম তার।
-
খুব ছোটবেলায় পরিবার নিয়ে চলে আসেন মুম্বাইয়ের দরিদ্র এলাকা ধারাভিতে। সেখানে জীবন ছিল কঠিন, পেট ভরানোর জন্য ছোটখাটো কাজ করতে হতো। জনি স্কুলে পড়ার পাশাপাশি রাস্তায় ছোটখাটো মিমিক্রি করে মানুষকে হাসাতেন। পড়াশোনা শেষ করতে না পারলেও তার অসাধারণ নকল করার ক্ষমতা ও তাৎক্ষণিক কৌতুক সৃষ্টির প্রতিভা তখনই নজরে আসে আশেপাশের মানুষের।
-
‘লিভার’ নামের পেছনেও আছে মজার গল্প। জনি একসময় হিন্দুস্তান লিভার কোম্পানিতে কাজ করতেন। অফিসের অনুষ্ঠানগুলোতে সহকর্মীদের হাসাতে তিনি মঞ্চে উঠতেন। একদিন তার মজাদার পারফরম্যান্স দেখে সহকর্মীরা মজা করে বলে ফেলল ‘এই জন তো আমাদের হিন্দুস্তান লিভারের গর্ব!’ সেই থেকেই তার নাম হয়ে যায় ‘জনি লিভার’।
-
জনি প্রথম মঞ্চে বড় সুযোগ পান কিংবদন্তি অভিনেতা সুনীল দত্তের নজরে পড়ে। সেখান থেকেই তার চলচ্চিত্রে প্রবেশ।
-
১৯৮৪ সালে ‘তামাশা’ ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু, কিন্তু আসল সাফল্য আসে ১৯৮৬ সালের ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ এবং পরে ‘বাজিগর’, ‘দিওয়ানা মাস্তানা’, ‘দুলহে রাজা’, ‘কোই মিল গ্যায়া’ এর মতো হিট ছবির মাধ্যমে।
-
তার অভিনয়ের বিশেষত্ব হলো শুধু কৌতুক নয়, চরিত্রের মধ্যে প্রাণ এনে দেওয়া। তার ডায়লগ, মুখভঙ্গি ও শরীরী ভাষা দর্শককে এক নিমেষে হাসির জগতে নিয়ে যেত।
-
জনি লিভারের স্ত্রী সুজাতা লিভার এবং তাদের দুই সন্তান জেসি ও জেমি। জেমি লিভারও বাবার পথ অনুসরণ করে কৌতুক ও বিনোদনের জগতে প্রবেশ করেছেন। পারিবারিক জীবনে জনি একজন শান্ত, ধর্মপ্রাণ ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত।
-
তিন দশকের বেশি সময় ধরে বলিউডে সক্রিয় জনি লিভার ১৩ বারের বেশি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছেন এবং ২ বার পুরস্কার জিতেছেন।
-
জনি সবসময় মানুষকে হাসালেও নিজের জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা, পরিবারের দায়িত্ব সবকিছু সামলিয়ে তিনি স্বপ্নের পথে এগিয়েছেন। তাই তার জীবনের গল্প কেবল বিনোদনের নয়, বরং এক অনুপ্রেরণার ইতিহাস।
-
জনি লিভার প্রমাণ করেছেন হাসি শুধু বিনোদন নয়, বরং জীবনের কঠিনতম লড়াইয়েরও অস্ত্র হতে পারে।