থালাপতি বিজয়: পর্দার রাজনীতি থেকে বাস্তবের আলোচনায়
দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার থালাপতি বিজয় শুধু অ্যাকশন, রোমান্স কিংবা ডান্সের জন্যই নয়, বরং রাজনৈতিক রঙ মেশানো চলচ্চিত্রের জন্যও ভক্তদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। বিশেষ করে তামিল সিনেমায় দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রবণতা আছে, জনপ্রিয় নায়ক মানেই মানুষের প্রতিনিধি। সেই ধারাতেই বিজয়ের কিছু সিনেমা দর্শকের কাছে শুধু বিনোদন নয়, হয়ে উঠেছে একধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য। তাকে নিয়ে আলোচনার মাঝেই দেখে নিতে পারেন থালাপতির জনপ্রিয় কিছু ছবি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
সম্প্রতি থালাপতি বিজয়ের মাদুরাই জনসভায় রেকর্ডসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
-
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তামিলাগা ভেট্রি কাজাগমের (টিভিকে) দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
-
আগামী ২০২৬ সালের গ্রীষ্মে তামিলনাডু বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন থালাপতি বিজয়।
-
বর্তমানে বিজয় কাজ করছেন তার বহুল প্রত্যাশিত শেষ সিনেমা ‘জনানায়াগান’ নিয়ে। এ ছবির পরই তিনি অভিনয়কে বিদায় জানাবেন এবং পূর্ণকালীনভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
-
সরকার: ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি বিজয়ের ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক। এখানে তিনি অভিনয় করেছেন এক সফল এনআরআই বিজনেস টাইকুনের চরিত্রে, যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভারতে ফিরে আসে। গল্পের মূল বার্তা ছিল স্পষ্ট, ভোটের গুরুত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। ছবিটি মুক্তির পর তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। এমনকি শাসকদলও ছবির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে, কারণ এতে ভোট কেনাবেচা ও রাজনৈতিক দুর্নীতির বাস্তব চিত্র উঠে আসে।
-
থুপ্পাকি: ২০১২ সালের এই ব্লকবাস্টার ছবিতে বিজয়কে দেখা গেছে সেনা কর্মকর্তার ভূমিকায়, যিনি দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবিরোধী মিশনে কাজ করেন। যদিও সিনেমাটি মূলত থ্রিলার ঘরানার, তবু এর মধ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও জাতীয় নিরাপত্তার বার্তা ছিল গভীরভাবে প্রোথিত। বিজয়ের শক্তিশালী সংলাপ, ‘আমি স্লিপিং সেলগুলোকে শেষ করে দেব’ দর্শকের মনে দেশপ্রেম জাগিয়েছে।
-
মের্সাল: ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মের্সাল সিনেমা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সিনেমার এক দৃশ্যে বিজয়কে বলতে দেখা যায় ‘সরকার যদি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় বিনামূল্যে সুযোগ দেয়, তবে জনগণ কর দিতে খুশি হবে’। এই সংলাপের জন্য শাসকদল বিজয় ও সিনেমার টিমের সমালোচনা করে। কিন্তু দর্শকরা সিনেমাটিকে ভিন্নভাবে গ্রহণ করেন এবং এটি করনীতির বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়।
-
ভারিসু: যদিও ভারিসু পরিবারকেন্দ্রিক ড্রামা, তবে এর ভেতর দিয়ে সমাজ ও ক্ষমতার লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। বিজয়ের ক্যারিশমা এবং নেতৃত্বের আভা দর্শককে বারবার মনে করিয়ে দেয়, তার সিনেমা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তাও বয়ে আনে।
-
থালাপতি বিজয়ের সিনেমায় বারবার উঠে এসেছে দুর্নীতি বিরোধিতা, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। এই কারণেই তাকে শুধু অভিনেতা নয়, ভবিষ্যতের নেতা হিসেবেও অনেকে কল্পনা করেন।
-
তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, এমজিআর থেকে জয়ললিতা, চলচ্চিত্র থেকে রাজনীতিতে যাওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিজয়ের জনপ্রিয়তা, বিশেষ করে তরুণ সমাজে, তাকে এই আলোচনায় সবসময় শীর্ষে রাখে।
-
থালাপতি বিজয়ের রাজনৈতিক রঙ মেশানো সিনেমাগুলো প্রমাণ করে, সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি সমাজকে ভাবাতে পারে, প্রশ্ন তুলতে পারে, এমনকি পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হতে পারে। হয়তো এই কারণেই বিজয় তামিল সিনেমার ‘থালাপতি’ জনগণের নেতা।