চিরকালীন নায়ক উত্তম কুমার
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অমর নাম উত্তম কুমার। তাকে শুধু একজন অভিনেতা বললে ছোট করে বলা হয়। তিনি ছিলেন যুগস্রষ্টা, যিনি বাঙালির রোম্যান্টিক কল্পনা, সিনেমার প্রতি ভালোবাসা, এমনকি নায়ক বলতে কী বোঝায়-তার সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন। বিশেষ এই দিনে ফিরে দেখা যাক তার জীবনের গল্প। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
উত্তম কুমারের আসল নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯২৬ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা এক মেধাবী কিশোর। গান, নাটক, খেলাধুলা-সবকিছুর সঙ্গেই ছিল তার সখ্য। তবে কেউই তখন বুঝতে পারেননি যে এই সাধারণ ছেলে একদিন বাংলার পর্দায় হয়ে উঠবেন ‘মহানায়ক’।
-
চলচ্চিত্রে প্রথম দিকে তার যাত্রা সহজ ছিল না। প্রথম সিনেমা মায়াডোর মুক্তি পেলেও দর্শকের নজর কাড়তে পারেনি। একসময় অনেকে তাকে ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ নামেও ডাকত। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম তাকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেল।
-
বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি সম্ভবত সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার। সাত পাকে বাঁধা, হারানো সুর, সাগরিকা, গৃহদাহ কিংবা চাওয়া পাওয়া-প্রতিটি ছবিই তাদের জুটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পর্দায় তারা শুধু নায়ক-নায়িকা ছিলেন না, ছিলেন বাঙালি প্রেম-স্বপ্নের প্রতীক।
-
শুধু রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে নয়, চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও উত্তম কুমার ছিলেন সমান দক্ষ। সত্যজিৎ রায়ের নায়ক ছবিতে তার অভিনয় আজও বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোচিত। সেখানে তিনি নিজের মধ্যেই এক নায়কের দ্বন্দ্ব, সংশয় ও যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। অনেক সমালোচক বলেন, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা অভিনয়ের অন্যতম উদাহরণ।
-
উত্তম কুমার ছিলেন দর্শকের আপনজন। তার হাসি, চোখের ভাষা, কণ্ঠস্বর-সবকিছুতেই ছিল এক অদ্ভুত আকর্ষণ। তিনি বাঙালির ঘরে ঘরে স্বপ্নের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। এ কারণেই তাকে ‘মহানায়ক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা আজও অন্য কারো সঙ্গে মানানসই হয় না।
-
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই হঠাৎ করেই তিনি পর্দা থেকে বিদায় নেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু তার সৃষ্ট চরিত্র, সংলাপ, গান, স্টাইল আজও বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছে।
-
উত্তম কুমার প্রমাণ করেছিলেন, নায়ক হওয়া মানে শুধু রূপালী পর্দায় অভিনয় করা নয়; দর্শকের মনে স্থায়ী আসন করে নেওয়াই আসল কৃতিত্ব।
-
আজকের দিনে নতুন প্রজন্মও যখন পুরোনো বাংলা সিনেমা খুঁজে দেখে, তখনও তারা উত্তম কুমারের অভিনয়ে মোহিত হয়ে যায়। সময়ের সীমানা ভেঙে তিনি আজও সমান জনপ্রিয়। তাই উত্তম কুমার শুধু এক যুগের নায়ক নন, তিনি বাংলা সিনেমার চিরকালীন মহানায়ক।