স্বপ্নের পর্দায় যে নারী এখনো দীপ্তিমান
‘ড্রিম গার্ল’ খ্যাত অভিনেত্রী হেমা মালিনীর জন্মদিন আজ। তার নাম উচ্চারণ করলেই মনে ভেসে ওঠে এক অনন্ত সৌন্দর্য, এক চিরচেনা হাসি আর সিনেমার পর্দায় রঙিন এক যাদু। তিনি শুধু একজন নায়িকা নন, বরং এক যুগের প্রতীক-যেখানে নারীর সৌন্দর্য, শক্তি আর আত্মবিশ্বাস একসাথে মিশে গেছে শিল্পের সূক্ষ্ম ছোঁয়ায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৪৮ সালের এই দিনে তামিলনাড়ুর অম্মানকুদিতে জন্ম হেমা মালিনীর। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন নাচপ্রেমী। ভরতনাট্যম ছিল তার প্রথম প্রেম, আর সেই নাচই তাকে এনে দেয় চলচ্চিত্রের দরজা খুলে দেওয়ার চাবি।
-
‘সপনো কা সওদাগর’ ছবিতে রাজ কপূরের বিপরীতে যখন তিনি প্রথম পর্দায় এলেন, দর্শক শুধু তাকে দেখেননি-তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছেন। তারপর থেকে একে একে ‘শোলে’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘জুগনু’, ‘ত্রিশূল’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘বাগবান’-প্রতিটি ছবিতে তিনি নিজের উপস্থিতি স্থায়ী করে গেছেন সময়ের পাতায়।
-
১৯৭৭ সালে ‘ড্রিম গার্ল’ ছবির পর থেকে হেমা মালিনীর নামের সঙ্গে এই উপাধি যেন চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। কিন্তু সেই ‘ড্রিম’ কেবল তার চেহারায় নয়-ছিল তার পরিশ্রমে, তার শৃঙ্খলায়, তার একাগ্রতায়। পর্দার পেছনে যে নারীটি ভোরবেলা উঠে নৃত্যের অনুশীলন করতেন, তারপর ক্যামেরার সামনে নিজের আলোকচ্ছটায় চরিত্রকে জীবন্ত করতেন-তিনি ছিলেন প্রকৃত সৃজনশীল স্বপ্নদ্রষ্টা।
-
হেমা মালিনী কখনোই ছিলেন না কেবল ‘নায়িকা’। তিনি ছিলেন নারী স্বাধীনতার এক নীরব কণ্ঠস্বর। এমন সময়, যখন বলিউডে নারী শিল্পীরা অধিকাংশ সময়েই ছিল পুরুষ চরিত্রের ছায়া, তিনি নিজের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন।
-
‘সীতা অউর গীতা’য় তার দ্বৈত চরিত্র ছিল যেন নারীর দুই রূপের প্রতিচ্ছবি-নরম আর শক্ত, লাজুক আর সাহসী। তার চোখে ছিল আত্মবিশ্বাস, তার হাঁটায় ছিল সৌন্দর্যের ভাষা আর সংলাপে ছিল এক নারীকে নিজের জায়গা জিতে নেওয়ার বার্তা।
-
তাদের প্রেম কাহিনি ছিল ঠিক সিনেমার মতোই। দুই তারকা, দুই জগৎ কিন্তু এক হৃদয়ের মিল। ধর্মেন্দ্র আর হেমার সম্পর্ক তখন অনেক বিতর্কও ডেকেছিল। তবুও সময় প্রমাণ করেছে-সেই ভালোবাসা ছিল সত্য, অটুট আর শ্রদ্ধার। দুই কন্যা ঈশা ও অহনা তাদের জীবনে তিনি যেমন এক নিবেদিত মা, তেমনি এক দারুণ অনুপ্রেরণা।
-
বলিউডের আলো পেরিয়ে তিনি যুক্ত হন রাজনীতিতেও। ভারতীয় জনতা পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে মথুরার মানুষের সেবায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু শিল্পী-মন কখনো রাজনীতি মানে না-তাই সংসদীয় দায়িত্বের ফাঁকেও নৃত্য-নাট্যের মঞ্চে তাকে দেখা যায় বরাবরের মতো মুগ্ধকর ছন্দে।
-
আজ, যখন তার বয়স সত্তরের ওপরে, তখনও হেমা মালিনীর হাসি যেন সময়কে ভুলিয়ে দেয়। তার চোখের দীপ্তি এখনো বলে সৌন্দর্য কেবল ত্বকের নয়, আত্মারও এক পরিমাপ। তিনি সেই অভিনেত্রী, যিনি প্রমাণ করেছেন জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই নারী নিজের আলোকিত রূপ তৈরি করতে পারে, যদি তার সাহস থাকে নিজের মতো বাঁচার।
-
হেমা মালিনী শুধু পর্দার নায়িকা নন, তিনি এক সময়ের প্রতীক, এক প্রেরণার নাম-যেখানে সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা আর স্বপ্ন একসাথে নাচে এক জীবনের মঞ্চে।