ছয় রূপে কানে নজর কাড়লেন সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড প্রিয়তি
আন্তর্জাতিক গ্ল্যামার দুনিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আবারও আলোচনায় মাকসুদা আখতার প্রিয়তি। কানের লাল গালিচায় এবার দশমবারের মতো হাঁটলেন তিনি। প্রতিবারের মতো এবারও নজরকাড়া ছয়টি ভিন্ন লুক ও বার্তা নিয়ে কানের রূপালি পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড। কখনো টেকসই ফ্যাশনের বার্তা, কখনো ক্লাসিক গ্ল্যামার, প্রতিটি সাজেই ছিল স্বকীয়তা আর সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা। তবে এবারের যাত্রা ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা; বড় টেল ও ভলিউমযুক্ত গাউন নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি। তবু সব সামলে সাহসিকতা ও স্টাইলের দ্যুতি নিয়ে কানে আরেকটি স্মরণীয় অধ্যায় যুক্ত করলেন প্রিয়তি। ছবি: মাকসুদা আখতার প্রিয়তীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
প্রিয়তির কান-যাত্রা শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১৪ সালে মিস আয়ারল্যান্ডের মুকুট জিতে প্রথমবার আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এরপর একে একে মিস আর্থ আয়ারল্যান্ড, মিস ইউনিভার্সাল রয়্যালটি, ইউকে টপ মডেল এবং আইরিশ মডেল অব দ্য ইয়ারের মতো খেতাবগুলো জিতে নিজের ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করেন। একই সঙ্গে তিনি একজন পেশাদার পাইলট, অভিনেত্রী এবং তিন সন্তানের মা-যা তাকে করে তোলে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
-
কান উৎসবেও তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ৭৪তম আসরে ‘টপ মডেল অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মডেলদের মাঝে প্রিয়তির পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। আর গত বছর, ৭৭তম কান উৎসবে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অংশগ্রহণ করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।
-
এ বছর কান উৎসবের অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্নরকম। উৎসব শুরুর আগের দিন আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাল গালিচায় বাড়তি ট্রেন বা অতিরিক্ত ভলিউমযুক্ত পোশাক নিষিদ্ধ। এতে একটু বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলেন প্রিয়তি ও তার টিম, কারণ পোশাক তৈরির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছেন ডিজাইনাররা, যারা মাসের পর মাস ধরে এসব গাউন তৈরি করেছিলেন।
-
তবুও সব সামলে নিয়ে, এবারের কান উৎসবে প্রিয়তি হাজির হন ছয়টি ভিন্ন থিম ও স্টাইলের পোশাকে। প্রথম তিন দিনের পোশাকে ছিল টেকসই ফ্যাশনের ছাপ, যা ডিজাইন করেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত ডিজাইনার ক্লেয়ার গারভি। মেকআপ ও হেয়ারস্টাইলের দায়িত্বে ছিলেন ক্রিস্টিনা জয়, যিনি প্রতিটি লুকেই এনেছেন পরিপূর্ণতা।
-
প্রথম দিন প্রিয়তি হাজির হয়েছেন একটি সাসটেইনেবল বা পরিবেশবান্ধব গাউনে, যার নকশা অনুপ্রাণিত ছিল ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা থেকে। ফ্লোরাল পিঙ্ক টোনের এই স্ট্র্যাপলেস মিনি ড্রেসে ছিল সুইটহার্ট নেকলাইন ও শিমারি ফেব্রিকের ঝলক। পোশাকজুড়ে দারুণ সূক্ষ্মভাবে বসানো হয়েছিল সিকুইন, মুক্তো আর ক্রিস্টালের কাজ, যা ড্রেসটিকে দেয় এক অভিজাত আবেদন। তবে নজর কাড়ে ফেদার (পালক) লাগানো একটি দীর্ঘ কেপ, যা ড্রেসের সঙ্গে ছুঁয়ে যায় মাটি-দৃশ্যতই পুরো লুকটির মূল আকর্ষণ ছিল এটি।
-
দ্বিতীয় দিনেও কান উৎসবের লালগালিচায় প্রিয়তির উপস্থিতি ছিল এক কথায় মন্ত্রমুগ্ধকর। সাদা রঙের রাজকীয় বল গাউনে ফ্রেমবন্দি হন তিনি, যা ছিল রাজহাঁসের সৌন্দর্য থেকে অনুপ্রাণিত। আইরিশ ঐতিহ্যবাহী ভাঙা হাতপাখা ও সূক্ষ্ম সাদা কাপড়ের সংমিশ্রণে তৈরি এই পোশাকে উপরিভাগে মুক্তার কারুকাজ আর নীচের দিকে ছিল রাফলের স্তরে স্তরে নকশা, যা পোশাকটিকে এনে দিয়েছে ঐশ্বর্য ও মাধুর্য। গাউনটির সৌন্দর্য আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলে প্রিয়তির সাজ। কানে শোভা পাচ্ছিল মুক্তা বসানো ফুলের ডিজাইনের দুল, আর স্টাইলিশ বানেও ছিল মুক্তার অলংকরণ। পুরো লুকটি পরিপূর্ণ হয় একটি ঝকঝকে সিলভার ক্লাচ হাতে নিয়ে।
-
সবুজ রঙের এই ফিউশন স্টাইলের গাউনে প্রিয়তি যেন হয়ে উঠেছিলেন আইরিশ সংস্কৃতির প্রতীক। সাসটেইনেবল উপাদানে তৈরি এই পরিবেশবান্ধব পোশাকটির নকশা অনুপ্রাণিত আইরিশ পুরাণ বা মিথলজি থেকে, যা ডিজাইনার উপস্থাপন করেছেন আধুনিকতার ছোঁয়ায়। গাউনটির বিস্তৃত ঘের এবং মাটিতে ছুঁয়ে যাওয়া ট্রেন লুকে এনেছে রাজকীয়তা ও জাঁকজমক। এ লুকের সঙ্গে প্রিয়তির নুড মেকআপ ছিল একদম মানানসই নির্ভার ও পরিশীলিত। আর কানে ঝুলছিল একজোড়া প্রজাপতির মতো হালকা নান্দনিক দুল, যা পুরো সাজে এনে দিয়েছে এক পরিপূর্ণতা।
-
আকাশি-নীলের কোমল আভায় কানে চতুর্থ দিনের লুকে নজর কাড়লেন প্রিয়তি। তার পরনে ছিল ওয়ান শোল্ডার, সাইড স্লিট ডিজাইনের একটি ঝলমলে গাউন, যার সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে মাথায় পরা একটি দৃষ্টিনন্দন হেডপিস। ফুল ও তারার কারুকাজে তৈরি এই হেডপিসটির নকশা করেছেন আইরিশ ডিজাইনার ফিওনা রাফটার যার সৌন্দর্যের ছায়া গাউনের রঙ ও ছাঁটেও স্পষ্ট। পায়ে ছিল ঝলমলে সিলভার হিল, আর হাতে অনুষঙ্গ হিসেবে থাকল ক্লাচ যা পুরো লুকে যোগ করেছে পরিপূর্ণতা।
-
আকাশি-নীলের কোমল আভায় কানে চতুর্থ দিনের লুকে নজর কাড়লেন প্রিয়তি। তার পরনে ছিল ওয়ান শোল্ডার, সাইড স্লিট ডিজাইনের একটি ঝলমলে গাউন, যার সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে মাথায় পরা একটি দৃষ্টিনন্দন হেডপিস। ফুল ও তারার কারুকাজে তৈরি এই হেডপিসটির নকশা করেছেন আইরিশ ডিজাইনার ফিওনা রাফটার যার সৌন্দর্যের ছায়া গাউনের রঙ ও ছাঁটেও স্পষ্ট। পায়ে ছিল ঝলমলে সিলভার হিল, আর হাতে অনুষঙ্গ হিসেবে থাকল ক্লাচ যা পুরো লুকে যোগ করেছে পরিপূর্ণতা।
-
কানের পঞ্চম দিনে ভেলভেটের অফ-দ্য-শোল্ডার মিডি গাউনে রেড কার্পেটে দ্যুতি ছড়ান প্রিয়তি। গাউনটির সাইড স্লিট ডিজাইন নিখুঁতভাবে মিলেছে তার পায়ে পরা বো হিলের সঙ্গে। এই পুরো মনোক্রম কালো লুকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মাথায় থাকা বেস্পোক হ্যাটটি, যা আইরিশ ডিজাইনার ফিওনা রাফটার কাস্টমাইজ করে তৈরি করেছেন। লুকটিকে আরও নজরকাড়া করে তোলে প্রিয়তির লাল লিপস্টিক, মুক্তার তৈরি নেকপিস ও ব্রেসলেটের ঝলক। পরিপূর্ণতার ছোঁয়া আসে হাতে নেওয়া কালো ক্লাচের মাধ্যমে।
-
কান উৎসবের শেষ লুকে প্রিয়তি ধরা দিয়েছেন নেভি ব্লু রঙের বিলাসবহুল ভেলভেট গাউনে। স্লিভলেস এই পোশাকটির ওপরের অংশ ঝলমলে রাইনস্টোন দিয়ে অলঙ্কৃত, যা গাউনটিকে দিয়েছে চোখধাঁধানো এক ঝলক। সাইড স্লিট ডিজাইন যুক্ত এই গাউনেও ছড়িয়েছে অনন্য আবেদন। মেকআপেও ছিল পরিপূর্ণতা। চোখে স্মোকি আইসের গভীরতা, ঠোঁটে ক্ল্যাসিক লাল লিপস্টিকের আভা। কানে দুলে দুলে ঝলক দিচ্ছিল মুক্তার ঝুলন্ত দুল, যা পুরো লুকের রাজকীয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।