শব্দের আগুনে জ্বলে ওঠা এক সাহসিনী কাপকেক
র্যাপ সংগীতের জগতে যখন পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য, তখন হঠাৎ যেন বজ্রপাতের মতো আবির্ভাব ঘটে এক নারী কণ্ঠের। যার সাহসী উচ্চারণ, অকপট ভাষা আর ব্যতিক্রমী বার্তা কাঁপিয়ে দেয় সামাজিক কাঠামো। তিনি এলিজাবেথ ইডেন হ্যারিস। যাকে সবাই কাপকেক নামে চেনে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৯৭ সালের এই দিনে শিকাগোর এক নিম্নবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। তার জীবনের শুরু যতটা সংগ্রামের, নিজের শব্দ-স্রোতে ঠিক ততটাই বিজয়গাঁথায় ভরা কাপকেকের পথচলা।
-
শিকাগো শহরের দরিদ্র এলাকাগুলোতেই কেটেছে তার শৈশব। মাত্র ৮ বছর বয়সে গির্জায় কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে শব্দের জগতে পা রাখেন তিনি।
-
মায়ের সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে কাটানো কঠিন সময় তাকে তৈরি করে এক অনমনীয় মানসিকতায়। তিনি নিজের র্যাপকে ভাবতেন মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে, নিজেকে প্রকাশের এবং অন্যদের জাগিয়ে তোলার ভাষা হিসেবে।
-
২০১৫ সালে ‘ডিপথ্রোট’ এবং ‘ভ্যাজাইনা’ নামের গান দুটি কাপকেককে র্যাপের জগতে ভাইরাল করে তোলে। অনেকে হয়তো তার গানকে প্রথমে শুধু যৌনতা নির্ভর মনে করে নেন, কিন্তু ভেতরে ছিল এক সামাজিক ভাষ্য-নারীর শরীর, স্বাধীনতা ও ভাষাকে সংযমের খাঁচায় আটকে রাখার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ।
-
তার গানের লাইনে লাইনে উঠে আসে দেহরাজনীতি, নারী-অধিকার, বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য। সাহসের সঙ্গে বলেন-নারীর শরীর তার নিজস্ব সম্পত্তি, তা নিয়ে লজ্জা নয়, গর্ব করা উচিত।
-
কাপকেক শুধু এক ‘এক্সপ্লিসিট’ র্যাপার নন, তিনি একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট। তার গানে যেমন যৌনতা স্পষ্ট, তেমনি স্পষ্টভাবে উঠে আসে-বডি পজিটিভিটি, অধিকারের সমর্থন, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ, ডিপ্রেশন, আত্মহত্যা প্রবণতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বার্তা।
-
তিনি নিজেও একাধিকবার মানসিক অবসাদের কথা স্বীকার করেছেন, এমনকি কয়েকবার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়েও নিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
-
বর্তমানে কাপকেক শুধুই গায়কী দিয়ে নয়, নিজের কণ্ঠে এক নতুন ফেমিনিজমের ভাষা তৈরি করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি নারী কণ্ঠ কতটা শক্তিশালী হতে পারে যদি তাকে নিজের মতো করে বলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়।