অ্যাঞ্জেলিনা জোলি: সৌন্দর্য, প্রতিভা আর মানবতার এক অনন্য সংমিশ্রণ
চোখে তীব্র আত্মবিশ্বাস, মুখভঙ্গিতে প্রজ্ঞার ছোঁয়া আর হৃদয়ে মানবতার স্পর্শ-এই তিন গুণ যেন একসঙ্গে মূর্ত হয়ে উঠেছে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ব্যক্তিত্বে। তিনি শুধুই হলিউডের রেড কার্পেটে ঝলমলে উপস্থিতি কিংবা অ্যাকশনধর্মী চরিত্রের সাহসী মুখ নন; তিনি একাধারে বিশ্বসুন্দরী, অস্কারজয়ী অভিনেত্রী, খ্যাতিমান পরিচালক, মানবাধিকারকর্মী এবং মা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবন যেন এক নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের উপাখ্যান, যেখানে রূপের ঝলক ছাপিয়ে উঠে আসে মেধা, মানসিক দৃঢ়তা আর মানবিক দায়বদ্ধতা। অভিনয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ছুঁয়ে গেছেন পৃথিবীর প্রান্তিক মানুষদের হৃদয়, প্রমাণ করে দিয়েছেন তারকা মানেই কেবল পর্দার আলো নয়, বরং সমাজের অন্ধকারেও আলো জ্বালানোর দায়িত্ব।
-
আজ তার জন্মদিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে তার জন্ম। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাবা ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা জন ভয়েট এবং মা মার্চেলিন বারট্র্যান্ড একজন মডেল ও অভিনেত্রী। অভিনয়ের প্রতি জোলির ঝোঁক আসলে ছিল রক্তে, পারিবারিক উত্তরাধিকার থেকেই।
-
ছোটবেলায় তিনি খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। স্কুলজীবনে সহপাঠীদের কাছ থেকে নানা রকমের কটুক্তি ও তুচ্ছতা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তবে তার চেহারায় যেমন ছিল সৌন্দর্যের ছাপ, তেমনি মনে ছিল জেদ আর সংগ্রামের শক্তি।
-
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফ্যাশন মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন জোলি।
-
অভিনয়ে প্রবেশ করেন ১৯৯৩ সালে, ‘সাইবোর্গ টু’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে তিনি প্রথম সাড়া ফেলেন ‘গিয়া’ (১৯৯৮) টেলিফিল্মে এক ট্র্যাজিক সুপারমডেলের ভূমিকায় অভিনয় করে।
-
এরপরই আসে সেই মাইলফলক ‘গার্ল, ইন্টারপোল’ (১৯৯৯)। এই সিনেমায় পারফরম্যান্সের জন্য তিনি অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার জিতে নেন সহ-অভিনেত্রী হিসেবে। এরপর ‘লারা ক্রফট: টম্ব রাইডার’ তাকে বানিয়ে তোলে অ্যাকশন হিরো।
-
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘সল্ট’, ‘ম্যালিফিসেন্ট’, ‘চেইঞ্জলিং’, ‘অ্যা মাইটি হার্ট’-এমন বহু জনপ্রিয় ও সমালোচকপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে নিজের জায়গা পোক্ত করে নেন তিনি।
-
অ্যাঞ্জেলিনা শুধু অভিনেত্রী নন, তিনি একজন দক্ষ চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজকও। ‘ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি’, ‘আনব্রোকেন’, ‘ফার্স্ট দে কিল্ড মাই ফাদার’ তার পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র। এসব কাজেও তিনি মানবতাবাদী বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
-
তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর (ইউনাইটেড নেশন্স হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস) এর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ৬০টির বেশি দেশ সফর করে শরণার্থী ও যুদ্ধাহত শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ পান।
-
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ব্যক্তিজীবনে বরাবরই সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন। অভিনেতা জনি লি মিলার এবং বিলি বব থর্নটন-এর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সময়ের দাম্পত্য জীবনের পর তিনি ২০০৫ সালে ব্র্যাড পিট-এর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। যদিও ২০১৬ সালে সেই সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।
-
তাদের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে ৬ সন্তান। তাদের মধ্যে তিনজন দত্তক নেওয়া এবং তিনজন জোলি-পিট দম্পতির জৈবিক সন্তান।
-
মা হিসেবে তিনি খুবই দায়িত্বশীল ও নিবেদিত। সন্তানদের নিয়ে নানা সময়ে সংবাদে উঠে এসেছেন গভীর আবেগ ও দায়িত্বশীলতার চিত্রে।